শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে আদালতে গেলেন দেবশ্রী।
শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জুটির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করলেন দেবশ্রী রায়। ঘটনাচক্রে, দেবশ্রী রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়কও বটে। শনিবার তিনি ওই মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। দল হিসাবে তৃণমূল তাঁর পাশেই রয়েছে বলে খবর।
সম্প্রতি বিজেপি-র হয়ে ময়দানে নেমে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘিতে এক কর্মসূচিতে যান শোভন-বৈশাখী। সেখানেই রাজ্যের শাসকদলকে আক্রমণের পাশাপাশি রায়দিঘির দু’বারের বিধায়কের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন তাঁরা। উল্লেখ্য, ২০১১ এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের জনপ্রিয় নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে হারিয়ে দেবশ্রীর জয় ‘মসৃণ’ করতে বড় ভূমিকা ছিল তৎকালীন জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভনের। কিন্তু ওইদিন রায়দিঘিতে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র দেবশ্রীকে জেতানোর জন্য এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। পাশাপাশিই বলেন, টোটো কেলেঙ্কারিতে জড়িত একজনের সঙ্গে তিনি ইচ্ছা করেই দূরত্ব রেখেছেন। শোভন-বান্ধবী বৈশাখীর বক্তৃতায় ছিল জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেবশ্রীর ব্যর্থতার ফিরিস্তি।
সেই দিনই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেবশ্রীও একহাত নিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখীকে। কিন্তু তখন তিনি বলেননি শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে একেবারে মানহানির মামলা করে বসবেন! রাজনীতির লড়াই এ বার গড়িয়ে গেল আদালতে। তবে দেবশ্রীর মানহানির মামলা দায়ের করা প্রসঙ্গে শনিবার বিশদে কিছু বলেননি বৈশাখী। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘উনি আদালতে গিয়েছেন তো! আদালতেই যা জবাব দেওয়ার দেব!’’
সূত্রের খবর, রায়দিঘিতে দেবশ্রীর বিরুদ্ধে করা শোভন-বৈশাখীর মন্তব্যের বেশকিছু অংশ বাছাই করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই কারণেই শোভন-বৈশাখীর ওই সভার ভিডিও ফুটেজ, বিভিন্ন অনলাইন খবরের লিঙ্ক ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর ‘তথ্যপ্রমাণ’ হিসেবে জোগাড় করেছেন দেবশ্রী। মানহানির মামলা দায়ের করার আগে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের কাছে ওই বিষয়ে মৌখিক অনুমতি চেয়েছিলেন। সূত্রের খবর, সেই অনুমতি তো তাঁকে দেওয়া হয়েইছে। পাশাপাশি, দলের পক্ষ থেকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। তার পরেই মামলা করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেবশ্রী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে থাকাকালীন শোভন-দেবশ্রীর সম্পর্ক ছিল বেশ ভাল। ইতিহাস বলে, ২০১৬ সালে দেবশ্রীকে রায়দিঘিতে ফের টিকিট দিতে ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু শোভন নিয়ে দায়িত্ব নেন দেবশ্রীকে জেতানোর। তিনি সেই প্রায় অসাধ্যসাধন করেও দেখিয়ে দেন। কিন্তু দলের সঙ্গে শোভনের দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই দেবশ্রীর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। কালক্রমে শোভনের বান্ধবী হয়ে ওঠেন বৈশাখী। ফলে দেবশ্রীর সঙ্গে দূরত্ব আরও বেড়ে যায় তাঁর। পর্যায়ক্রমে পরিবার ছেড়ে গোলপার্কের বহুতলের বাসিন্দা হন দিদির ‘কানন’।
ঘটনাচক্রে, শোভন-বৈশাখী যেদিন দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে গিয়েছিলেন যোগদান করতে, সেদিন সেখানে অকস্মাৎ দেখা গিয়েছিল দেবশ্রীকেও। যার ফলে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হন শোভন-বৈশাখী। তাঁরা এমনকি, দলে যোগ দিতেও প্রায় অসম্মত হয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল, দেবশ্রীও একইদিনে এবং একইসঙ্গে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে এসেছেন। বাস্তবে অবশ্য তা হয়নি। দু’জনকে বোঝানো হয়, দেবশ্রী বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন না। তখন তাঁরা বিজেপি-র পতাকা নিতে সম্মত হন। সামপ্রতিক সভায় সেদিনের ঘটনাও কথাও উল্লেখ করেছিলেন শোভন। সেই সব ‘অবমাননাকর’ মন্তব্যের জন্যই আদালতে মামলা করলেন দেবশ্রী। যা দেখে পোড়খাওয়া এবং রসিক তৃণমূল নেতারা বলছেন, ‘‘এতদিন শোভন-বৈশাখী-রত্নার ত্রিমুখী লড়াই দেখা যেত। দেবশ্রীর সংযোজনে সেটা চতুর্মুখী হল!’’