ট্রেন ধরার জন্য ভিড় দমদমে। —নিজস্ব চিত্র।
পর পর তিন দিন। শনি, রবির পর সোমবার— চূড়ান্ত যাত্রীভোগান্তি শিয়ালদহের উত্তর ও মেন শাখায়। কথা ছিল দমদম জংশনে নন-ইন্টারলকিংয়ের কাজ হবে ৫২ ঘণ্টা। সোমবার সকালে রেল দাবি করে, নির্ধারিত সময়ের অন্তত ৩ ঘণ্টা আগেই সেই কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকালে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। মেন শাখার ট্রেন ন্যূনতম ঘণ্টাখানেক আর বনগাঁ ও হাসনাবাদ শাখার ট্রেন ২-৩ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। দমদমের আউটার সিগন্যালে ট্রেন দাঁড়িয়ে থেকেছে দীর্ঘ ক্ষণ। সারা দিন এ ভাবে কাটার পর রাতেও স্বাভাবিক হয়নি পরিষেবা। একই রকম দেরিতে চলেছে সব লোকাল ট্রেন।
ন্যূনতম ৩০ মিনিট এবং সর্বাধিক দেড় ঘণ্টা দেরিতে চলেছে সব লোকাল। রবিবার রাত ১টায় নন-ইন্টারলকিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে দমদমে। রেলের দাবি ছিল, সোমবার সকাল থেকেই স্বাভাবিক হবে পরিষেবা। কিন্তু ঘটল তার উল্টোটাই। কাজ শেষ হওয়ার ২০ ঘণ্টা পরেও স্বাভাবিক হল না পরিষেবা।
সোমবার সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাঁদের অভিজ্ঞতা, কোনও ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে তো চলেইনি, উল্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে বিভিন্ন স্টেশনে। রাতেও একই ছবি। রাত ১১টার শিয়ালদহ-বনগাঁ লোকালের নিত্যযাত্রী প্রীতম হালদার বলেন, “রোজ যে ট্রেন ধরি, সেটা ধরতে এসে দেখি দেড় ঘণ্টা আগের ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাত ৯টা ৪৭ মিনিটের ট্রেন শিয়ালদহ থেকে ছেড়েছে রাত ১১টা ২৪ মিনিটে। দেরি করে ছাড়ার ফলে ট্রেনে ভিড়ও বেশি।”
শিয়ালদহ থেকে দেরি করে ছাড়ার পর দমদমে এসে ফের আটকে পড়া। দমদমে ঢোকার আগে হয় দাঁড়িয়ে পড়ছে বা দমদমে ঢুকে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রেন। যাত্রীদের অনেকেরই বক্তব্য, দমদম পার না হওয়া পর্যন্ত ভরসা নেই। কখন বাড়ি পৌঁছতে পারবেন তাঁরা তার ঠিক নেই।
দমদম স্টেশনের নন-ইন্টারলকিংয়ের কাজের জন্য শনি এবং রবিবার বহু লোকাল, এক্সপ্রেস বাতিল করা হবে তা আগেই জানিয়েছিল রেল। বলা হয়েছিল ১৪৩টি লোকাল বাতিল থাকবে। রোজ যে সংখ্যায় লোকাল ট্রেন চলে এই সব শাখায়, তার ৩৭ শতাংশ ট্রেন বাতিল করা হবে। বাকি ট্রেন টাইম টেবল মেনে চলবে বলেই জানিয়েছিল রেল। শনিবার ভোর থেকেই অনিয়মিত হয়ে পড়ে শিয়ালদহ শাখার ট্রেন পরিষেবা। রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন নিত্যযাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা আগেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। সোমবারও পরিবর্তন হয়নি ভোগান্তি-চিত্রের। কোনও ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে তো চলেইনি, উল্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে বিভিন্ন স্টেশনে। ট্রেনের মধ্যে অপেক্ষা করতে করতে একটা সময় যাত্রীরা গত দু’দিনের মতো লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে দমদম স্টেশনে এসেছেন। মঙ্গলবার ও কি এই একই ছবি দেখা যাবে। সেই ভেবেই আঁতকে উঠছেন সকলে।