লালকুঠি খুলে দেওয়া হোক, চান পর্যটকেরা

এক জন দার্জিলিঙের লালকুঠিতে বসে দু’দশক পাহাড় শাসন করেছেন। অন্য জন ক্ষমতায় এসে গোর্খা রঙ্গমঞ্চে বসেই পাহাড়ের প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছেন। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (চিফ) বিমল গুরুঙ্গ অবশ্য মাঝেমধ্যে যান লালকুঠিতে। অথচ সবুজে ঘেরা লালকুঠিতে বসেই ২০ বছরের উপর দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল চালিয়েছিলেন প্রয়াত জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিঙ্গ।

Advertisement

রেজা প্রধান

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

লালকুঠি। —ফাইল চিত্র।

এক জন দার্জিলিঙের লালকুঠিতে বসে দু’দশক পাহাড় শাসন করেছেন। অন্য জন ক্ষমতায় এসে গোর্খা রঙ্গমঞ্চে বসেই পাহাড়ের প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছেন। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (চিফ) বিমল গুরুঙ্গ অবশ্য মাঝেমধ্যে যান লালকুঠিতে। অথচ সবুজে ঘেরা লালকুঠিতে বসেই ২০ বছরের উপর দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল চালিয়েছিলেন প্রয়াত জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিঙ্গ। তবে সাধারণ বাসিন্দারা তো বটেই, পযর্টকদের কাছেও দুটি ভবনই এখনও আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে। দার্জিলিং এলে চিড়িয়াখানা, টয়ট্রেন, টাইগার হিলের সঙ্গেই লালকুঠিতেও ঢুঁ মারছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা।

Advertisement

মোর্চা নেতারা অনেকেই জানান, কোনও সময় বিমল গুরুঙ্গের পছন্দের তালিকায় লালকুঠি ছিল না। এর দুটি কারণ। প্রথমত, সুবাস ঘিসিঙ্গের ব্যবহার করা জায়গায় গুরুঙ্গ প্রথম থেকেই বসা পছন্দ করেননি। তাই ক্ষমতায় এসেই তিনি নিজের মত করে রঙ্গমঞ্চকে সাজিয়ে তোলেন। গুরুঙ্গ নিজে বলছেন, ‘‘আমি সব সময় লালকুঠিতে থাকাটা পছন্দ করি না। পাহাড়ের মানুষ এতে সমস্যায় পড়েন। এতে তো শহর থেকে অনেক দূর, তার পর আবার আমি ওই রাস্তায় গেলে অনেকক্ষণ ট্রাফিক ঠিক রাখা নিয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। তাতে সাধারণ মানুষ চলাফেরায় সমস্যায় পড়েন।’’ তিনি জানান, এর থেকে রঙ্গমঞ্চে কোনও সমস্যা হয় না। মানুষ সহজেই আসতে পারেন। নিজেদের সমস্যা বা পরামর্শ আমাকে জানাতে পারেন। তা ছাড়া লক্ষ্যপূরণ হলে ভবিষ্যতে ভানু ভবনই সদর দফতর হবে।’’

দার্জিলিঙের লালকুঠি কোচবিহার রাজাদের সম্পত্তি ছিল। হিল কাউন্সিল গঠনের পর তা সরকারের তরফে কাউন্সিলকে হস্তান্তর করা হয়। তার পর থেকে ধীরে ধীরে লালকুঠিতে বাসিন্দা এবং পর্যটক গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রথমে পযর্টকদের ভিতরে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০১ সালে ঘিসিঙ্গের উপর হামলার ঘটনার পর বাসিন্দাদেরও আর লালকুঠিতে ঢুকতে দেওয়া হত না। বড় দেওয়াল, ফ্লাড লাইট, বড় ঝোপঝাড়-গাছপালা কেটে ফেলা হয়। বাংলোটিকে নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলেন ঘিসিঙ্গ। অপূর্ব বাংলোটি বাইরে থেকে দেখা ছাড়া বিশেষ অনুমতি মিললেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি পেতেন কেউ কেউ। গুরুঙ্গের রাজনৈতিক উত্থান ও জিটিএ চিফ হওয়ার পর বদলাতে শুরু করে হাল। আগের মতো এখন কড়াকড়ি নেই। অনুমতি নিয়ে ভিতরেও যাওয়া যায়।

Advertisement

অন্যদিকে, ম্যাল রোডের ভানু ভবন এক সময় টাউন হল নামেই শৈলশহরে পরিচিত ছিল। ১৯৯৭ সালে ঘিসিঙ্গ স্বপ্নের প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করে হিল কাউন্সিলের মাধ্যমে তা ভেঙে গোর্খা রঙ্গমঞ্চ তৈরি করেন। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সেখানেই করা ছিল ঘিসিঙ্গের উদ্দেশ্য। তাঁর আমলে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। বিমল গুরুঙ্গ জিটিএ গঠন করেই রঙ্গমঞ্চের কাজ শেষ করান। সেখানেই তৈরি করেন জিটিএ-র দফতর। পাহাড়ে থাকলে সেখানে বসে সকাল থেকে অফিস করেন প্রতিদিন। জিটিএ সভার বৈঠকও হয়। সেই তুলনায় তাঁর আরেকটি দফতর লালকুঠিতে তাকে খুব কমই যেতে দেখা গিয়েছে।

লালকুঠি একসময় ‘গোরী বিলাস’ নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৭৮ সালের পর একটি বাংলা সিনেমা হিন্দিতে ডাবিং করে নামকরণ করা হয় লালকুঠি। ওই সিনেমার শ্যুটিং ছাড়াও একাধিক সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে ওই বাংলোতে। দার্জিলিং এলে তাই অনেকে সেই টানেই লালকুঠি দেখতে যান। পর্যটন ব্যবসায়ীদের তাই দাবি, লালকুঠিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করে খুলে দেওয়া হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement