গাড়ির অপেক্ষায় পর্যটকরা। দার্জিলিঙের চকবাজারে। ছবি: রবিন রাই।
না, বিমল গুরুঙ্গের জঙ্গি আন্দোলন নয়। পুজো-পর্যটনে এখন পাহাড়ের সব থেকে বড় চিন্তা বৃষ্টি।
সেই দশমীর দিন থেকে শুরু হয়েছে। এখনও থামার লক্ষণ নেই। আবহাওয়া দফতের পূর্বাভাস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও থামার সম্ভাবনা নেই। এই অকাল বর্ষা এর মধ্যেই পাহাড়-ডুয়ার্সে ছাপ ফেলতে শুরু করেছে। এ দিনই বাগডোগরায় বাতিল হয়েছে সাতটি উড়ান। বহু জায়গায় হয় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, নয় অবস্থা খুব খারাপ। বহু পথেই যান চলাচল বন্ধ বা খুব ধীরে চলছে। ফলে যে দূরত্ব যেতে চার ঘণ্টা লাগে, তা লাগছে প্রায় আট ঘণ্টা।
মিরিকের দিকে পথ ভেঙেছে আগেই। সরাসরি যোগাযোগ বুধবার থেকে বন্ধ। কালিম্পঙের দিকে কালিঝোরায় বুধবার রাতে ধস নেমেছে। সিকিমের অবস্থা আরও খারাপ। পেলিং যাওয়ার পথে ধস। নামচি থেকে রংপো যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। ডুয়ার্সেও বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে রয়েছে যাবতীয় সাফারি। তিন জায়গা মিলিয়ে এখন ঘরবন্দি অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক। এবং এর উপরে রোজ ঢুকছেন আরও ’শয়ে ’শয়ে মানুষ। তাঁরা কী ভাবে নিজেদের পছন্দের এলাকায় পৌঁছবেন, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন।
সব মিলিয়ে এই বৃষ্টি যেন ভেঙে পড়েছে উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসার মাথাতেই।
টয়ট্রেনে চেপে বিসর্জনের পথে।
কার্শিয়াঙে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
পুজোর এই সময়টায় প্রতি বছরই দার্জিলিং, সিকিম এবং ডুয়ার্সে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। হোটেল, রিসর্ট, হোম স্টে-গুলিতে জায়গা মেলা ভার। এ বার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে যাঁরা পাহাড়ে যেতে চাইছেন, প্রথমেই তাঁদের বলে দেওয়া হচ্ছে— অমুক পথ বন্ধ। অমুক রাস্তা দিয়ে যাবেন না, বিপজ্জনক। যেমন, মিরিকের রাস্তায় রক্তিখোলার কাছে ধস নামায় রাস্তা বন্ধ। ঘুরে পানিঘাটা দিয়ে যেতে হচ্ছে। একই ভাবে সিকিমের পথে চার জায়গায় ছোট-বড় ধস নেমেছে। গাড়ি চলছে, কিন্তু খুব ধীরে। সিকিমের মধ্যে তো একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। নামচি তো আছেই, জোরথাং থেকে মেলি যাওয়ার পথও বন্ধ। এগুলি সিকিমের মূল যোগাযোগকারী সড়ক। ফলে অনেক ঘুরে যেতে হচ্ছে পর্যটকদের। আর তাতে মিটার চড়ছে গাড়ির।
বৃষ্টি হচ্ছে বলে গত কয়েক দিন ধরেই সিকিমের গাড়ি ভাড়া গড়ে পাঁচশো টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গাড়িচালকরা। বেড়ে গিয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং যাওয়ার ভাড়াও। বৃহস্পতিবার গাড়ির ভাড়া চড়েছে আরও এক ধাপ। সাধারণত, যে দূরত্বে গাড়ি দু’হাজার টাকা
ভাড়া নেয়, তারই ভাড়া এখন ৩২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। তার উপরে সময়ও লাগছে অনেক বেশি। এ দিনই শিলিগুড়ি থেকে আরিতার গিয়েছে ছ’জনের একটি দল। সেই দলেরই এক জন, নন্দিনী মুখোপাধ্যায় জানালেন, চার ঘণ্টার রাস্তা যেতে লেগে গেল দ্বিগুণ সময়। দিনটাই মাটি!
নবমীর দিন সপরিবার দার্জিলিং পৌঁছেছেন দীপ্তেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই টানা বৃষ্টি চলছে পাহাড়ে। বেজায় খাপ্পা কলকাতার দীপ্তেন্দুবাবু বললেন, ‘‘কোথায় টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখব, ম্যালে বসে আড্ডা দেব, তা নয়। এখন সব পরিকল্পনা বাতিল করে হোটেলের ঘরে বসে আছি।’’ প্রতিবারই পুজোর ছুটিতে দার্জিলিঙে আসেন সরকারি চাকুরে বিপ্লব বসু। এ বারও এসেছেন। বললেন, ‘‘ঘুরব কোথায়? শুধু ছাতা কিনেছি। তা নিয়েই রোজ হেঁটে ম্যালে যাচ্ছি আর হোটেলে ফিরছি।’’
পর্যটক থেকে ব্যবসায়ী, সকলের কাছেই এখন প্রশ্ন— এই পরিস্থিতি কখন বদলাবে? আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, যে ঘূর্ণাবর্তটির জেরে এই অবস্থা, সেটি বুধবার সকাল থেকে দুর্বল হতে শুরু করে। বৃষ্টিও তখন কিছুটা কমে। কিন্তু এরই মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিহার থেকে উত্তরবঙ্গের উপরে তৈরি হয়েছে। এ দিন অক্ষরেখাটি পশ্চিমে সরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। তার জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘আগামী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি বদলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই।’’
বিপদ পাহাড়
কোথায় ধস
• দার্জিলিঙের পথে রক্তিখোলা, হিলকার্ট রোডে কয়েকটি জায়গায়, কালিঝোরায়, বিরিকধারায়
• সিকিমে পেলিং যাওয়ার পথে, নামচি-রংপো ও নামচি-কিতামের রাস্তায়
• ডুয়ার্সে গরুবাথান, রকি আইল্যান্ডের পথে ভাঙন
• বৃষ্টির জন্য ব্যাহত মেরামতের কাজ
• দার্জিলিং পাহাড়, সিকিম, ডুয়ার্স মিলিয়ে আটকে প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক
পূর্বাভাস
• আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এমনই বৃষ্টির সম্ভাবনা
উড়ান বিপর্যস্ত
• দৃশ্যমানতা কম, তাই বাগডোগরা থেকে বাতিল ৭টি উড়ান
কন্ট্রোল রুম
• দার্জিলিং জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা কন্ট্রোল রুম ০৩৫৪-২২৫৫৭৪৯