ভরা বর্ষাতেও দার্জিলিং এ বার জমজমাট! সৌজন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃষ্টি-বাদলের সময়েও ম্যাল চৌরাস্তায় এখন উপচে পড়া ভিড়। যার সুবাদে ভাল ব্যবসার আশা করছে পর্যটন মহল। রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, ও মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নিজেদের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে চাইছেন দার্জিলিঙের চা শিল্প মহলও। রাজনীতির কারবারিরাও নেমে পড়েছেন আসরে। মোর্চা নেতারা মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে। আবার পাহাড়ের তৃণমূল এবং মোর্চা-বিরোধী দলগুলি তৃণমূল নেত্রীকে সামনে রেখে একজোট হওয়ার রাস্তা আরও মসৃণ করতে কোমর বাঁধছেন। সকলেই রাষ্ট্রপতি-মুখ্যমন্ত্রীর সফরের খুঁটিনাটি জানতে ভিড় করছেন ম্যালে।
এক ঝাঁক মন্ত্রী ও নবান্নের কর্তাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙে পৌঁছবেন আজ, সোমবার সন্ধেয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যাচ্ছেন পর দিন মঙ্গলবার। সে দিন ম্যালে সংবর্ধনা জানানো হবে তাঁকে। পর দিন দুপুরে সেখানেই নেপালি কবি ভানুভক্তের জন্মদিন পালন করবে রাজ্য সরকার। সেখানেও প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি। রাতে রাষ্ট্রপতির সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করছে রাজ্য। পর দিন বৃহস্পতিবার দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভার অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রাষ্ট্রপতির। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে শিলিগুড়ি ফিরে বিশেষ বিমানে ফিরে যাবেন দিল্লিতে। সে দিনই দিল্লি যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীরও।
ভিভিআইপি, ভিআইপিদের এই ভিড়ের সুবাদে বর্ষাতেও জমিয়ে ব্যবসার আশা করছেন পর্যটন শিল্পের লোকজন। কারণ, রাষ্ট্রপতি, মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বর্ষার যাবতীয় বিপদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে দার্জিলিঙে উপচে পড়ছে ভিড়। হোটেলে, সরকারি অতিথি নিবাসে তিল ধারণের জায়গা নেই। পাহাড়ের নানা প্রান্ত থেকে তো বটেই, সমতলের বিভিন্ন এলাকা থেকেও কৌতূহলী ও আমন্ত্রিতরা হাজির দার্জিলিঙে।
ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘এটা তো দারুণ ব্যাপার। বর্ষার সময়ে পাহাড়ে এত বড় মাপের কোনও সরকারি অনুষ্ঠান আগে হয়েছে বলে শুনিনি। এতে জুলাইয়ের গোড়া থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকদের বেশ ভিড় থাকবে। ‘মনসুন-ট্যুরিজম’-এর বার্তা জোরালো হবে। বর্ষার সময়েও যে পাহাড়ে বেড়ানো যেতে পারে, সেটা আরও স্পষ্ট হবে।’’
বস্তুত, পাহাড়ে বর্ষা মানেই টানা বৃষ্টি ও ধসের ভয়। এ সময় পাহাড়কে সাধারণত এড়িয়েই চলেন পর্যটকরা। নেতা-মন্ত্রীরাও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বড় একটা পা রাখেন না পাহাড়ে। এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতেই ধস মোকাবিলায় ৩০টির বেশি কুইক রেসপন্স টিম গড়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। উত্তরবঙ্গের এডিজি এন রমেশবাবু সকাল-সন্ধে সে সবের তদারকি করছেন। এডিজির কথায়, ‘‘২৪ ঘণ্টা পাহাড়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় নজরদারি চলছে। ধস পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুম ফি বছরই খোলা হয়। এ বার তা আরও জোরদার করা হয়েছে।’’
পাহাড়ের নানা মহলের উচ্ছ্বাস, উদ্বেগ, তৎপরতার সব খবর পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। দলীয় সূত্রের খবর, পাহাড়ের মুখে হাসি ধরে রাখতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ অবস্থান থেকে এতটুকুও সরতে রাজি নন। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে পাহাড়ে সাক্ষাৎপ্রার্থী কাউকে নিরাশ করবেন না সেই বার্তাও তাঁর তরফে পৌঁছে গিয়েছে পাহাড়ে।