গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। শেষমেষ অনশনকারী জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোকে রাতেই ভর্তি করানো হয়েছে হাসপাতালে। আরজি কর হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি তিনি। বাকি অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে ধর্মতলার অনশনমঞ্চকে ঘিরে। আরজি করের অনিকেত মাহাতো আরজি কর হাসপাতালেরই সিসিইউয়ে রয়েছেন। এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন বাকি ছ’জন। স্নিগ্ধা হাজরা, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, তনয়া পাঁজা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং পুলস্ত্য আচার্য। মনোবল অটুট থাকলেও সকলেরই শরীরের অবস্থার কমবেশি অবনতি হচ্ছে ক্রমশ। স্বাভাবিক ভাবেই। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার নতুন করে আবার আলোচনায় ডাকবে কি? না-ডাকলে কী হবে? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আরজি কর আন্দোলন এবং সরকারের মধ্যেকার অচলাবস্থা ঘিরে।
আজও নজর অনশনকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে
রক্তে শর্করার মাত্রা কমছে। রক্তচাপ ওঠানামা করছে। মূত্রে ‘কিটোন বডি’ মিলেছে। তবে অনশনের এক সপ্তাহে মনোবল অটুট ধর্মতলায় অনশনকারী ছয় জুনিয়র ডাক্তারের। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের দুই জুনিয়র ডাক্তারও অনশনে বসেছেন। তাঁরা স্থিতিশীল বলে খবর। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার অনশনকারীদের মধ্যে অনিকেত মাহাতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। আপাতত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল। তবে সঙ্কটমুক্ত নন ওই জুনিয়র ডাক্তার। অশনশনরত জুনিয়র ডাক্তার সায়ন্তনী ঘোষ হাজরার কথা, ‘‘আমরা ৯ অগস্টকে ভুলব না। আমাদের শরীর দুর্বল। কিন্তু আমাদের মনোবল কমেনি। আজ (শুক্রবার) এত মানুষের ভিড়। সকলে মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাচ্ছেন, বিচারের দাবি তুলছেন। এই ভিড় আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করছে।’’ শুক্রবার সায়ন্তনীদের অনশন এবং তাঁদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আপডেটের দিকে নজর থাকবে।
ত্রিধারাকাণ্ডে ধৃতদের মুক্তি পাওয়ার কথা
সপ্তমীতে ‘ত্রিধারা সম্মিলনী’ মণ্ডপে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করে স্লোগান দেওয়ায় ন’জনকে প্রথমে আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত ওই ন’জনের এক সপ্তাহের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। তবে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট ধৃতদের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে এক হাজার টাকার বন্ডে। তদন্তের প্রয়োজনে তাঁদের থানায় হাজিরা দিতে হবে। শনিবার জামিন পেতে পারেন ন’জন। সেই ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর থাকবে।
অনশনমঞ্চের বাইরে আরজি কর আন্দোলন
আরজি কর আন্দোলনের ঝাঁজ ক্রমশ বাড়ছে। নবমীতে সেই আন্দোলন এক নতুন চেহারা নিল। আবারও সাধারণ মানুষকে দেখা গেল আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে। তাঁদের ডাকে নবমীর দুপুর থেকেই ধর্মতলা চত্বরে ভিড় জমিয়েছেন সাধারণ মানুষ। শুধু তা-ই নয় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারেরাও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শনিবার অনশনমঞ্চের বাইরে আরজি কর আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেয়, নজর থাকবে সে দিকে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কী পদক্ষেপ করবে নবান্ন
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে শুক্রবার চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই সঙ্গে, স্বাস্থ্যভবনের তরফে শুক্রবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জুনিয়র ডাক্তারের দাবির তালিকায় থাকা বিভিন্ন কাজের অগ্রগতির খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। যদিও আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ প্রসঙ্গে এখনও কিছু জানায়নি রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে শনিবার অনশনের সপ্তাহপূর্তির দিনে নবান্ন কী পদক্ষেপ করে, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
দশমীর সিঁদুর খেলা, বিসর্জন
বিজয়া দশমীর বিসর্জন শুরু হবে কলকাতার বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে। তিথি অনুযায়ী শনিবার শারদোৎসব শেষে বিজয়া। তাই মূলত বাড়ির দেবী প্রতিমা বিসর্জন হবে। তা হলেও কলকাতার ১৬টি ঘাটে বিসর্জনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। কলকাতা পুরসভা, পুলিশ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই বিসর্জন প্রক্রিয়ায় কাজ করবেন। বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জন শুরু হতে পারে রবিবার থেকে। এমনটাই খবর প্রশাসন সূত্রে। তবে কলকাতার বিভিন্ন বড় পুজো দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। চলবে প্যান্ডেল ও প্রতিমাদর্শন।