ওষুধ কেনায় দুর্নীতি রুখতে নয়া ব্যবস্থা সরকারি হাসপাতালে

এ বার থেকে সরকারের ঠিক করে দেওয়া চারটি সংস্থার কাছ থেকেই জরুরি প্রয়োজনে লোকাল পারচেজ করতে হবে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

সরকারি হাসপাতাল এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি আর নিজেদের ইচ্ছেমতো কোনও ওষুধপত্র ও চিকিৎসার সামগ্রী ‘লোকাল পারচেজ’ বা স্থানীয় ভাবে কিনতে পারবে না।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকা জারি করে লোকাল পারচেজকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
এ বার থেকে সরকারের ঠিক করে দেওয়া চারটি সংস্থার কাছ থেকেই জরুরি প্রয়োজনে লোকাল পারচেজ করতে হবে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে। ওই সংস্থাগুলির একাধিক ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে দু’টি সংস্থা কলকাতার, একটি হুগলির এবং একটি বর্ধমানের। এরা ‘সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স’-এর (সিএমএস) নির্ধারিত দামে ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রী দিতে রাজি হয়েছে। ভবিষ্যতে সংস্থার সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
হাসপাতালের লোকাল পারচেজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনিতে হাসপাতালগুলি ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রী কেনে সিএমএস-অনুমোদিত ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার কাছ থেকে। কোনও ভাবে কোনও সংস্থা যদি ওষুধ সরবরাহ করতে দেরি করে অথবা
হঠাৎ করে হাসপাতালে যদি এমন কোনও ওষুধ বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়, যা সেই সময়ে সেখানে নেই এবং সিএমএস-ও তৎক্ষণাৎ সরবরাহ করতে পারছে না, তখন দরকার হয় লোকাল পারচেজের। স্থানীয় ভাবে কোটেশন ডেকে কোনও সংস্থা বা দোকানকে বাছাই করে তাদের কাছ থেকে হাসপাতাল এত দিন সেই জিনিস কিনতে পারত। বহু জায়গায় এই কেনাকাটা নিয়ে টাকা বা কমিশনের খেলা চলত বলে অভিযোগ স্বাস্থ্যকর্তাদের। এতে এক শ্রেণির চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, স্টোরকিপার ও হাসপাতালকর্মীরা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।
উচ্চপদস্থ এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হত, সিএমএসের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে অনেক বেশি দামে জিনিস কেনা হত এবং অনেক নিম্নমানের জিনিস কেনা হত। এতে সরকারের টাকা খরচ হত, রোগীও খারাপ মানের জিনিস পেতেন। নতুন নিয়মে এই সব বন্ধ হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সিএমএস অনুমোদিত কিছু ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাকে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও তারা দেরি করে জিনিস সরবরাহ করত। যার জন্য লোকাল পারচেজ দরকার হত। নতুন ব্যবস্থায় তারাও সংযত হবে। কারণ, তারা জানবে, আমাদের একটা ‘সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স’ রয়েছে।’’
নতুন নির্দেশিকার কথা জানাজানি হতেই হাসপাতালগুলিতে তোলপাড় আলোচনা চলছে। কেউ একে সমর্থন করছেন। কেউ আবার বলছেন, ‘‘আমরা সিএমএসের থেকে অনেক কম টাকাতেও অনেক ভাল জিনিস কিনতে পারতাম। এখন সেই পথ বন্ধ হবে। এতে সরকারেরই ক্ষতি।’’ এই দাবি উড়িয়ে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘নতুন ব্যবস্থায় যাঁদের স্বার্থে ঘা লেগেছে, তাঁরাই এই অপবাদ দেবেন। এর ফলে অযথা কমিশনের লোভে স্থানীয় ভাবে জিনিস কিনে ফেলে রাখা, অপ্রয়োজনীয় বা নিম্নমানের ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রী কেনা আটকানো যাবে। রোগীদের উপকার হবে।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে ওষুধ, ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ, তুলো, স্টেন্ট, পেসমেকার— এই রকম যে কোনও কিছু লোকাল
পারচেজের দরকার হলে ওই চারটি সংস্থা থেকে কিনতে হবে। হাসপাতালকে বরাত দিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব কম্পিউটারাইজড স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেমে। যদি সরকারি তালিকাভুক্ত সেই ওষুধ বা চিকিৎসা-সামগ্রী সিএমস সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, তখন লোকাল পারচেজ করা যাবে। সরকারি তালিকায় নেই, কিন্তু রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য দরকার, এমন ওষুধ বা সামগ্রীও কেনা যাবে। কিনতে হবে সিএমএস বা ‘ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইজিং অথরিটি’-র বেঁধে দেওয়া দামে। হাসপাতালকে ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রীর জন্য যে টাকা দেওয়া হয়, তার ২০ শতাংশ এই জরুরি ভিত্তিক কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement