—ফাইল চিত্র।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে তৃণমূলের ন’জন-সহ বিরোধী সাংসদের সাসপেন্ড হওয়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও বৈঠক হওয়ার কথা, সব কিছু ঠিক থাকলে। তার আগে সংসদে কমপক্ষে ৩৩ জন সাংসদের সাসপেনশন নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা। তৃণমূল সূত্রে খবর, তিনি বলেছেন, ‘‘ভাগ্য ভাল যে, আমি এখন সাংসদ নই!’’
মমতা সাত বারের সাংসদ। দলীয় সূত্রে খবর, একসঙ্গে এত জন সাংসদের সাসপেন্ড হওয়া নিয়ে তিনি অত্যন্ত মর্মাহতও। ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘যা ঘটছে, তা হওয়া উচিত নয়। আমি ভাগ্যবান যে, আমি সাংসদ নই এখন। এ তো দেখছি পুরো পার্লামেন্ট সাসপেন্ড হওয়ার মতো অবস্থা। স্বৈরতন্ত্র চলছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’
সোমবার শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতার মাঝেই নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন বিরোধী সাংসদেরা। তুমুল চিৎকার শুরু হয় সংসদ কক্ষে। প্রথমে দুপুর ২টো ৪৫ মিনিট, পরে তিনটে পর্যন্ত সভার কাজ মুলতুবি করে দেন স্পিকার। তার পরেও পরিস্থিতি তপ্ত হওয়ায় অন্তত ৩৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করে দেন স্পিকার। সাম্প্রতিক সময়ে এক সঙ্গে এত জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার বিষয়টিকে ‘নজিরবিহীন’ বলেই বর্ণনা করছে বিরোধীরা। আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে শীতকালীন অধিবেশন। তত দিন এই সাংসদেরা অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন না।
গত বাদল অধিবেশনেও ‘অসংসদীয় শব্দ’ প্রয়োগ করার জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর। এ বারও তাঁকে সাসপেন্ড করা হল। সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের তালিকায় তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল মণ্ডল, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল, অসিত মাল, শতাব্দী রায় রয়েছেন। শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ৬৭ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। লোকসভা থেকে নিলম্বিত হওয়ার পর অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘বিজেপির সংখ্যাধিক্য রয়েছে। তাই দিয়ে সংসদে পেশিশক্তি দেখাচ্ছে। সংসদকে বিজোপি ও আরএসএসের কার্যালয়ে পরিণত করতে চাইছে।’’ লোকসভায় কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, ‘‘সংসদের নিরাপত্তা যে ভাবে ভেঙে পড়েছে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করা হয়েছিল। তাঁরা বাইরে অনেক কথা বললেও সংসদে কিছু বলছেন না। সেই প্রশ্ন তুললেই বিরোধীদের উপর আক্রমণ নেমে আসছে।’’
রাজনীতিকদের একাংশের মত, ইন্ডিয়ার বৈঠকের আগে সংসদের এই ঘটনা বিরোধীদের আরও এককাট্টা করবে। শুধু তা-ই নয়, মমতা যে ভাবে সরব হলেন, তাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বুধবারের বৈঠক নতুন মাত্রা পেয়ে গেল।