বাম আমলে ‘লাল দুর্গ’ গড়বেতার দাপুটে নেতা ছিলেন তিনি। এখনও সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য। ছোট আঙারিয়া মামলা ‘খ্যাত’ সেই তপন ঘোষের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের স্কুল পরিচালন সমিতি। আর তা নিয়ে শোরগোল জেলা তৃণমূলের অন্দরেই।
তপনবাবু গড়বেতার মঙ্গলাপোতা হাইস্কুলের শিক্ষক। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১১-র ৬ মে থেকে ২০১৫-র ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি স্কুলে আসেননি। ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’র জন্য স্কুলে যেতে পারছেন না জানিয়ে তখন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তপনবাবু। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে স্কুলে যোগ দেন তিনি। সম্প্রতি তপনবাবু ওই সাড়ে চার বছরের বকেয়া বেতন চেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। তাতে সাড়া দিয়ে তৃণমূল পরিচালিত স্কুল পরিচালন সমিতি জেলা শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছে, রাজ্য সরকার যদি তপনবাবুকে বকেয়া বেতন দিতে চায় তা হলে সমিতির আপত্তি নেই। জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল মানছেন, “গড়বেতার ওই স্কুল থেকে একটি আবেদনপত্র দফতরে এসেছে বলে শুনেছি। স্কুলের একটা সুপারিশ রয়েছে। বিষয়টি দেখে পদক্ষেপ করবো।”
বিষয়টি জানাজানি হতেই ওই স্কুল পরিচালন সমিতিকে ভর্ৎসনা করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। জানিয়ে দেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। গড়বেতার তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর কথায়, “ওই শিক্ষকের বকেয়া বেতনের জন্য কোনও ভাবেই স্কুল পরিচালন সমিতি সুপারিশ করতে পারে না। তপন ঘোষদের অত্যাচারের সেই সব দিন গড়বেতাবাসী ভুলতে পারেন না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি এবং দলের শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতা মধুসূদন গাঁতাইত একই সুরে বলেন, “একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকবেন। আর তাঁর বকেয়া বেতনের জন্য সমিতি সুপারিশ করবে, এটা হতে পারে না।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি তপন দে-ও মানছেন, “একটা ভুল হয়ে গিয়েছে!” তপন ঘোষ বিতর্কিত নাম। ছোট আঙাড়িয়া গণহত্যায় জড়ানোর পরে গোটা রাজ্য তাঁকে এক ডাকে চিনত। পরে অবশ্য বেকসুর খালাস পান তিনি। নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলা-সহ অন্য মামলাতেও জামিন পান। গোটা ঘটনায় তপনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রাপ্য টাকা চেয়ে আবেদন করেছিলাম প্রধান শিক্ষকের কাছে, তৃণমূলের পরিচালন সমিতিকে নয়। পরে তৃণমূলের ভিতরে কী হয়েছে, আমি কী করে বলব!’’