বোমার-খোঁজে: নিজস্ব চিত্র
দলাদলি চলবে না বলে দিনকয়েক আগেই উত্তর ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সন্দেশখালি-কাণ্ডে শাসকদলের সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাই সামনে আসছে। দলের জেলা নেতৃত্ব গোলমালের দায় বিজেপির দিকে ঠেললেও গ্রামবাসীরা তো বটেই, স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশও মানছেন, এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দলেরই দুই গোষ্ঠীর গোলমালে শনিবার তেতে ওঠে সন্দেশখালি। গোলমালের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত জয়নাল মোল্লা-সহ পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সকলেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত।
এক বাড়ির গরু অন্যের বাগানে ঢুকে খড়-বিচালি খাওয়াকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্দেশখালির জেলিয়াখালিতে যে গোলমালের সূত্রপাত, তা গড়িয়েছিল দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে। নিহত হন নিজামুদ্দিন মোল্লা ওরফে ময়না নামে এক যুবক। ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট চলে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মোটরবাইক, নৌকা, ধানের গোলা। ভাঙচুর করে পোড়ানো হয় গোটা দশেক দোকান। মহিলাদের শ্লীলতাহানিও হয়। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে, রবিবার দুপুরেও পাখিরালয় এবং পশ্চিমখণ্ড গ্রামে ছিল শ্মশানের স্তব্ধতা। দোকান বা পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর থেকে তখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। বারুদ্দের গন্ধ তখনও মোছেনি। ভেসে আসছিল মহিলাদের কান্না।
এ দিন সকালে নিহতের দেহ নিয়ে গ্রামে মিছিল হয়। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ধরণীধর পান্ডা, জেলিয়াখালির উপরপ্রধান শ্যামল নস্কর-সহ কয়েক হাজার মানুষ। বিকেলে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি এবং সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো জেলিয়াখালি যান। নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান ইদ্রিশ। গোলমালে দলেরই পাঁচ জন ধরা পড়লেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি দুই নেতাই। ইদ্রিশ বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা হয়েছে যারা এ ভাবে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’’
তবে, গ্রামবাসী ও তৃণমূলেরই একটি অংশের অভিযোগ, এলাকা দখল নিয়ে ব্লক সভাপতি শিবু হাজরার সঙ্গে দলীয় নেতা সাইফুদ্দিন মোল্লা গোষ্ঠীর বিবাদের জেরেই শনিবার খুন হন নিজামুদ্দিন। দুই নেতাই ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। গোলমালের দায় চাপিয়েছেন বিজেপির ঘাড়ে। মহকুমাশাসক (বসিরহাট) নীতেশ ঢালি জানিয়েছেন, পুড়ে যাওয়া ঘরের হিসেব মতো পলিথিন এবং চাল পাঠানো হয়েছে।