সৌগত রায়। —ফাইল চিত্র।
’২৪-এর লোকসভা ভোটে বাংলায় ‘খেলা’ ঘুরিয়ে দিয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। তৃণমূল তো বটেই, এমনটা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারাও। এই ‘তত্ত্ব’ মানছেন তৃণমূলের চার বারের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ও। যদিও দমদমের সাংসদের ‘পর্যবেক্ষণ’ খানিক ভিন্ন। তাঁর দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের সৌজন্যে বাংলার মহিলা ভোটারদের সিংহভাগই যে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন, এমনটা নয় । বিশেষত, শহর এলাকায় মহিলা ভোটারদের মন জোড়া ফুলের দিকে ছিল না বলে মনে করেন সৌগত। মঙ্গলবার বরাহনগরে একটি রাজনৈতিক সভায় সৌগত বলেন, ‘‘মহিলারাই আমাদের জিতিয়েছেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য বস্তির গরিব মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছেন। গ্রামের সবাই (মহিলা) ভোট দিয়েছেন। কিন্তু, শহরের অবস্থাপন্ন মহিলা, যাঁরা বড় ফ্ল্যাটে থাকেন, তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেননি। আবার সংখ্যালঘুরা একশো শতাংশ ভোট দিয়েছেন আমাদের।’’
বস্তুত, বাংলায় লোকসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, অন্তত ১৫টি আসনেই মহিলা ভোটেই বাজিমাত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূল সরকারের নানা জনমোহিনী, নারীকল্যাণমূলক প্রকল্প অনুঘটকের কাজ করেছে এই জয়ে। উলুবেড়িয়া, কৃষ্ণনগর, মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, বহরমপুর, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, বালুরঘাট, কোচবিহার, রায়গঞ্জ, আলিপুরদুয়ার ইত্যাদি কেন্দ্রে মহিলা ভোটারদের সিংহভাগই ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। কিন্তু সৌগত বলছেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার শহরাঞ্চলে তেমন প্রভাব ফেলেনি।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে মমতা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। এখন ওই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন বাংলার কয়েক কোটি মহিলা। আগে সাধারণের জন্য ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি এবং জনজাতির মহিলাদের জন্য বরাদ্দ ছিল এক হাজার টাকা। তবে লোকসভা ভোটের আগে ওই আর্থিক অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার এবং ১২০০ টাকা।
অন্য দিকে, বরাহনগরের ওই সভা থেকে তৃণমূলত্যাগী প্রাক্তন বিধায়ক তথা এ বারের লোকসভা ভোটে কলকাতা উত্তরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়কে কটাক্ষ করেছেন সৌগত। সাংসদের অভিযোগ, তৃণমূলে থাকাকালীন কর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। তিনি বলেন, ‘‘সব সময় দেখতাম, তাপস মিটিং ডেকে কাউকে না কাউকে ধমক দিচ্ছে। সব সময় ‘এই, এটা তুমি করেছ কেন?’— এটা করলে কেউ পার্টি করবে না। পার্টিকে ভালবেসে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবেসে মানুষ রাজনীতিতে আসেন। ধমক খাওয়ার জন্য নয়।’’
সৌগতের সংযোজন, ‘‘ও ভেবেছিল ও পার্টির চেয়ে বড়।’’ পাশাপাশি বরাহনগর উপনির্বাচনে জয়ী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরাজ প্রশংসা করেছেন দমদমের সাংসদ। তিনি বলেন, ‘‘উনি ভালবাসার বিধায়ক। বরাহনগরেএই প্রথম কোনও মহিলা বিধায়ক হলেন।’’ উল্লেখ্য, তৃণমূলের যে ২৯ জন প্রার্থী লোকসভা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ১১জন মহিলা।