বিধানসভা চত্বরে ধর্নায় রায়াত হোসেন সরকার এবং সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়ার দাবিতে বিধানসভা ভবনের চৌহদ্দির বাইরে ধর্নায় বসবেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকার। উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূলের ওই দুই প্রার্থী শপথ নিতে চেয়ে বৃহস্পতিবার ধর্না দেবেন বিআর অম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে।
বিধানসভা এবং রাজভবনের টানাপড়েনে ভোটে জেতার ২২ দিন পরেও বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়া হয়নি সায়ন্তিকা এবং রায়াতের। শপথ নেওয়ার দাবিতে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বিধানসভা চত্বরে ধর্নায় বসেছিলেন দু’জনেই। তাঁদের দাবি ছিল, রাজ্যপাল বা তাঁর মনোনীত প্রার্থী বিধানসভায় এসে তাঁদের শপথ পাঠ করাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বদলে ৯ মিনিটের হাঁটাদূরত্বে রাজভবনে বসে রাজ্যপাল দুপুর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন তৃণমূলের দুই জয়ী প্রার্থীকে শপথগ্রহণ করাবেন বলে। তার পরে চলে গিয়েছেন দিল্লি।
বুধবারের এই ঘটনার পরে ধর্না শেষে সায়ন্তিকারা হাজির হন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে। তাঁর কাছে জানতে চান, এর পরে তাঁদের কী করা উচিত! কারণ, তাঁদের শপথগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দূর হওয়ার বদলে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পরে বিধানসভায় এসে আলোচনা করেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকও। তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, এর পরেই সিদ্ধান্ত হয় শপথগ্রহণের দাবিতে বৃহস্পতিবারও অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশে ধর্না দেবেন সায়ন্তিকা-রায়াতেরা।
বরাহনগর এবং ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন সায়ন্তিকা এবং রায়াত। তার পর থেকেই তাঁদের শপথগ্রহণ নিয়ে জটিলতা চলছে। কয়েক দিন আগে তৃণমূল অভিযোগ করে, রাজভবনের সবুজ সঙ্কেত না পাওয়ায় ভোটে জিতেও শপথ নিতে পারছেন না সায়ন্তিকা এবং রায়াত। পাল্টা রাজভবনের তরফে বিধানসভার স্পিকারকে না-জানিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে চিঠি পাঠিয়ে শপথ নিতে আসতে বলা হয় সায়ন্তিকা এবং রায়াতকে। পরে বিধানসভার সচিবালয়ের কাছ থেকে বিধায়ক সংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়ে পাঠায় রাজভবন।
এতে ক্ষুব্ধ বিধানসভার স্পিকার বিমান ২০ জুন একটি চিঠি দিয়ে রাজ্যপালকে সাংবিধানিক নিয়ম স্মরণ করিয়ে দেন। অন্য দিকে, সায়ন্তিকারাও চিঠি দিয়ে রাজ্যপালকে জানান, তাঁরা রাজভবনে নয়, বিধানসভায় স্পিকারের কাছেই বিধায়ক পদের শপথ নিতে চান। সোমবার পর্যন্ত বিষয়টি এখানেই থমকে ছিল। আচমকাই মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। রাজভবনের তরফে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি বিস্তারিত জবাবি পোস্ট করা হয়। তাতে বিধানসভার স্পিকারের কড়া সমালোচনা করে রাজ্যপাল জানান, নবনির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে যে চিঠি স্পিকার দিয়েছেন, তাতে রাজ্যপাল এবং রাজভবনের সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। কারণ, সংবিধানেই বলা আছে বিধায়কদের শপথগ্রহণের বিষয়ে শেষ কথা বলবেন রাজ্যপাল।
ওই পোস্টের পর নতুন করে সায়ন্তিকা এবং রায়াতকে ইমেল পাঠিয়ে রাজভবনে এসে শপথগ্রহণের অনুরোধ করা হয় বুধবার দুপুরে। কিন্তু তাঁরা যাননি। মঙ্গলবার ওই চিঠি পাওয়ার পরে সায়ন্তিকারা এসেছিলেন বিমানের সঙ্গে পরামর্শ করতে। সেই সাক্ষাতের পরে তাঁরা জানিয়ে দেন, তাঁরা রাজভবনে যাচ্ছেন না। তার বদলে বিধানসভাতেই বসে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন শপথ নেওয়ার জন্য।