(বাঁ দিকে) চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান। প্রকাশ্যে আসা গণপিটুনির ভিডিয়োর দৃশ্য (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
চোপড়ায় ঘটনায় এ বার দুঃখপ্রকাশ করলেন চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান। রবিবার চোপড়ায় ঘটনায় গ্রেফতার তাজম্মুল ওরফে জেসিবিকে হামিদুলের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছিলেন বিরোধীরা। রবিবারই হামিদুল জানিয়েছিলেন, তিনি এই ঘটনাটির কথা জানেন। নিগৃহীতা অভিযোগ করলে জেসিবিকে গ্রেফতারও করা হবে। সোমবার সেই হামিদুল চোপড়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশও করলেন। হামিদুল বলেন, ‘‘যা হয়েছে তা একদমই ঠিক হয়নি। আমি মেনে নিচ্ছি। ওই জায়গায় জাতপাত সংক্রান্ত সমস্যা হলে সালিশি সভা হয়। একে আমি বা আমার দল একদমই সমর্থন করি না। আমার নামে অপপ্রচার হচ্ছে যে, আমি নাকি বলেছি, ‘মুসলিম রাষ্ট্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটে’। আমি ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ কথা মুখেই আনিনি। বিরোধীরা আমার নামে অপপ্রচার করছে। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’’
অন্য দিকে, চোপড়ার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির জাতীয় সভপতি জেপি নড্ডা এবং সাংসদ কঙ্গনা রানাউত এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা করেছেন বালুরঘাটের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও।
রবিবার দুপুরেই তৃণমূলের চোপড়ার নেতা তাজম্মুল ওরফে ‘জেসিবি’র একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োয় দেখা যায় এক তরুণীকে রাস্তার মধ্যে ফেলে এক ছড়া কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারছেন জেসিবি। মার খেতে খেতে গুটিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। তার পরে আবার শুরু হচ্ছে মার। একই সঙ্গে এক তরুণকেও একই ভাবে মারতে দেখা যায় (ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )। তবে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা। পরে ইসলামপুরের পুলিশ সুপারও জানান, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযানও শুরু হয়েছে এলাকায়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় জেসিবিকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার চোপড়ার ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি দিন দুয়েক আগে চোপড়া থানা এলাকার লক্ষ্মীপুরে ঘটেছিল। অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস। তবে তৃণমূলকে এ বিষয়ে তৎপর হতে দেখা যায় রবিবার, ঘটনাটির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে।
রবিবার দুপুরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়ও। সেলিম ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘‘সালিশি সভাও নয়। অপরাধের বিচার এবং শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। যার ডাকনাম জেসিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এ ভাবেই বিচার ব্যবস্থাকে দুরমুশ করা হচ্ছে চোপড়ায়।’’ পরে একই ভিডিয়ো পোস্ট করে মালবীয় লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে থাকা বাংলার কুৎসিত মুখ।... প্রত্যেক গ্রামেই সন্দেশখালি রয়েছে।’’
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গরে একটি ভয়ঙ্কর ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, যা বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দেয়। আরও খারাপ লাগছে যে তৃণমূলের বিধায়ক এবং ক্যাডারেরা বিষয়টিকে মান্যতা দিচ্ছেন। সন্দেশখালি হোক, উত্তর দিনাজপুর হোক বা অন্য কোনও জায়গা, দিদির পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়।’’
অন্য দিকে, তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘চোপড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে তা তৃণমূল বা আমাদের সরকার কোনও ভাবে সমর্থন করে না। এটা আমরা বার বার বলেছি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতিতদের পুলিশি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আরও যদি কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাঁরাও পার পাবেন না। তবে তফাত অন্য জায়গায়। ৩৪ বছরের বাম শাসনে বাংলায় এ রকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনও বাম নেতাকে প্রকাশ্যে এসে নিন্দা করতে শুনিনি বা পুলিশ গ্রেফতার করেছে দেখিনি। দেশে বিজেপি শাসিত বহু রাজ্যেও এই ধরনের ঘটনা হামেশাই ঘটে। কিন্তু তা নিয়ে পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে বা বিজেপি নেতা বিরোধিতা করছেন, তেমনটা ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দেখা যায় না। এটা একমাত্র বাংলাতেই সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই ধরনের ঘটনায় ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি রেখেছেন। শুধু মুখে বলা হয় না, কাজেও করে দেখানো হয়।’’