Junior Doctors Strike

চিকিৎসকদের ‘নজরে’ রাখার বার্তা তৃণমূলের

জেলায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কে কাজ করছেন, আর কে করছেন না, তা দেখতে দলের কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিলেন শাসক দলের নেতা কুণাল ঘোষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৫৪
Share:

কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই চিকিৎসকদের উপরে নজরদারি করতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। জেলায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কে কাজ করছেন, আর কে করছেন না, তা দেখতে দলের কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিলেন শাসক দলের নেতা কুণাল ঘোষ। কর্মীদের ‘কাজ না করা’ চিকিৎসকদের তালিকা তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিরোধীরা ও চিকিৎসক সংগঠনগুলি অবশ্য একে ‘হুমকি-সংস্কৃতি’ বলেই চিহ্নিত করেছে।

Advertisement

আর জি কর-কাণ্ডের আবহে আন্দোলন নিয়ে বরাবরই দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছে শাসক শিবির। জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন ভাঙাতে যখন শনিবার ফের বাক্যালাপ শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে দিনই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে দলের বিজয়া সম্মিলনীর সভা থেকে কুণাল বলেছেন, “কিছু চিকিৎসক আছেন, যাঁরা সপ্তাহে দু’-তিন দিন জেলায় নিজের কাজ করে শহরে চলে যান। বেসরকারি হাসপাতালে বা নিজস্ব ‘প্র্যাকটিস’ করেন। তাঁদের তালিকা তৈরি করে দলকে পাঠান।” তবে সকলেই যে এই বন্ধনীতে পড়েন না, তা জানিয়ে কুণালের পরামর্শ, “যাঁরা মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁদের আগলে রাখার দায়িত্বও স্থানীয়দেরই নিতে হবে।” এই দুই পরামর্শ যে রাজ্যব্যাপী কার্যকর করতে চাইছেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন কুণাল।

কুণালের এই মন্তব্যকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় হুমকি-প্রথার প্রতিফলন বলেই অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এ তো গৃহযুদ্ধের ডাক! গত ১৩ বছর ধরে তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকেরা হুমকি-প্রথা চালিয়েছেন। তালিকা তৈরি করলে ঘরের লোকজনের নামই আসবে। প্রতিবাদীদের উপরে প্রতিহিংসার খাঁড়া নামিয়ে আনাই লক্ষ্য।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, “তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ যা বলেছেন, তা দেখার জন্য সরকার আছে। দল কেন সেই দায়িত্ব নেবে? এটা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হুমকি-প্রথারই প্রতিফলন। তৃণমূলের নেতা যা বলেছেন, তাতে ঘুরপথে সরকারের আংশিক সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা হয়েছে।”

Advertisement

চিকিৎসক সংগঠনগুলিও কুণালের এই মন্তব্যকে হুমকি-প্রথা বলেই চিহ্নিত করেছে। সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের বক্তব্য, “সরকারি চিকিৎসকেরা কত ক্ষণ কাজ করছেন, বা করছেন না, তা দেখার জন্য স্বাস্থ্য প্রশাসন আছে। এই বিষয়ে কুণাল ঘোষ কেন নাক গলাচ্ছেন? শীর্ষ স্তর থেকে হুমকি সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রণের এটাই প্রমাণ।” কার্যত একই সুরে সরব হয়েছেন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্রও। তাঁর কথায়, “উনি ভয় দেখাবেন আর আমরা ভয় পাব, এটা ভাবলে ভুল করছেন। আমরা যাঁরা হুমকি-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়ছি, তাঁদের কাছে এটাও কিন্তু হুমকিই।” কুণালের এই মন্তব্যকে শাসক দলের নেতাদের একাংশের ধারাবাহিক ভাবে ‘হুমকি দিয়ে আন্দোলন বন্ধের’ চেষ্টা হিসেবে দেখছেন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা। তিনি বলেছেন, “এটিও এক প্রকার হুমকি। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিলে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যপার। কিন্তু প্রশাসনের ভিতরে ও বাইরে কী হচ্ছে, তা কোনও বহিরাগতের থেকে শুনতে রাজি নই।”

কুণাল অবশ্য হুমকির অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেছেন, “হুমকি কেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে উন্নতি করেছেন, একাংশ কাজ না করায় তার সুফল মানুষ পাচ্ছেন না। তাই দলের মাধ্যমে তা নির্দিষ্ট করে জানা গেলে স্বাস্থ্য প্রশাসন পদক্ষেপ করতে পারবে।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, চিকিৎসা না পেয়ে বহু জায়গায় হাসপাতাল নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তা আগে ঠিক করা গেলে চিকিৎসক এবং হাসপাতালও সুরক্ষিত থাকবে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement