পুলিশ নিগ্রহে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অধরাই

গত এক বছরে দু’বার আলিপুর থানার পুলিশকে আক্রান্ত হতে হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হাতে। দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শাসকদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের সাহস দেখাতে পারেনি লালবাজার। পরে আদালত থেকে আগাম জামিন পান ওই অভিযুক্তরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৫৮
Share:

গত এক বছরে দু’বার আলিপুর থানার পুলিশকে আক্রান্ত হতে হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হাতে। দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শাসকদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের সাহস দেখাতে পারেনি লালবাজার। পরে আদালত থেকে আগাম জামিন পান ওই অভিযুক্তরা।

Advertisement

সেই ধারা বজায় রেখেই ১৭ ডিসেম্বর আলিপুর আদালত চত্বরে পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারলেন না তদন্তকারীরা। আলিপুর পুলিশ কোর্টের ইনস্পেক্টরের ঘরের সামনে (জেনারেল রেকর্ডস বা জিআর শাখার সামনে) দুই পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র এবং তাঁর ছেলে। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, আগের দু’টি ঘটনার মতোই এ বারও ওই নেতা এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার না করে আগাম জামিন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে লালবাজারের কর্তাদের বিরুদ্ধে।

যেমনটা হয়েছিল পুরভোটের আগে আলিপুর থানার তৎকালীন ওসিকে নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত শাসকদলের নেতা প্রতাপ সাহার ক্ষেত্রে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার না করে জামিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ঘটনার দশ দিনের মাথায়। তবে আগাম জামিন নেওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন আদালত চত্বরে পুলিশকর্মীদের মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ৭৪ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিপ্লব মিত্র। শনিবার ফোনে তাঁর দাবি, তিনি কোনও পুলিশকর্মীকে মারধর করেননি। তিনি এলাকাতেই আছেন। অথচ তাঁকে পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না বলে মিথ্যে কথা বলছে। উল্টে তাঁর অভিযোগ, অভিযোগকারী পুলিশকর্মী এবং তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের মারধর করেছে। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার না করে বাঁচাতে চাইছে।

Advertisement

লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, আলিপুরের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে আলিপুর-কাণ্ডে যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি তা স্বীকার করে নিয়েছে লালবাজার। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মুরলিধর শর্মার সঙ্গে শনিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি।

গত ১৭ ডিসেম্বর দুপরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র এবং তাঁর ছেলে অরুণ মিত্র একটি রক্তদান শিবিরের কার্ড দেওয়ার জন্য আলিপুর আদালতে যান। তাঁরা নিজেদের মোটরবাইকটি নিয়ে সোজা ধাক্কা মারেন জিআর শাখার এক পুলিশকর্মীকে। ধাক্কা মারার পর মূল দরজা আটকে বাইকটি দাঁড় করান বাবা ও ছেলে। প্রথমে বেপরোয়া ভাবে বাইক চালিয়ে আঘাত করা এবং পরে অফিসের সামনে মোটরবাইক রাখায় আপত্তি করেন জিআর শাখার পুলিশকর্মীরা। এ নিয়ে বচসা শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। অভিযোগ, বিপ্লববাবু এবং অরুণ, দু’জনেই জিআর শাখার এক কর্মীকে মারধর করেন। হুমকিও দিতে থাকেন। এর পরে বিপ্লব মিত্র নিজের প্রভাব খাটিয়ে আলিপুর থানায় দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার কিছু ক্ষণ পরেই মোটরবাইক চেপে আলিপুর আদালত চত্বরে হাজির হয় এক দল যুবক। অভিযোগ, ওই মোটরবাইক বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন বিপ্লব এবং অরুণ। নিজেদের তৃণমূলকর্মী দাবি করে ওই যুবকেরা জিআর শাখার পুলিশকে হুমকি দিতে থাকেন। ওই দলে থাকা ওমপ্রকাশ সিংহ নামে স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী পুলিশকর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকিও দেন।

লালবাজার সূত্রের খবর, শীর্ষকর্তাদের কাছ থেকে নির্দেশ না আসায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের। পুলিশের নিচুতলার খবর, আলিপুরের বিপ্লব মিত্রকে ধরতে চেয়েছিল স্থানীয় থানা। কিন্তু তাতে এলাকায় অশান্তি হতে পারে ওই যুক্তি দেখান পুলিশের এক শীর্ষকর্তা। ফলে সে যাত্রা ওই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পরিকল্পনা বদলে যায় বলে অভিযোগ তদন্তকারী অফিসারদের একাংশের।

লালবাজার অন্য একটি অবশ্য বলছে, পুলিশের রুল বুক অনুযায়ী যা যা করা উচিত, সেটাই করতে বলা হয়েছে থানার তদন্তকারীদের। পুলিশের নিচুতলার একাংশের অভিযোগ, ওই টালবাহানার মধ্যেই আলিপুর আদালত কাণ্ডের কুশীলবেরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এলাকায় তিনি যে বিভিন্ন কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন, তা মেনে নিয়েছেন বিপ্লব মিত্র। আলিপুর গোপালনগরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই এলাকায় রক্তদান শিবির আয়োজন করেছিলেন ওই অভিযুক্ত নেতা। যেখানে কলকাতা পুরসভার মেয়র থেকে শাসকদলের অনেক নেতাই উপস্থিত ছিল।

পুলিশের নিচুতলা অবশ্য উপরতলার এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নয়। এক তদন্তকারী অফিসারের অভিযোগ, শীর্ষকর্তাদের সিদ্ধান্তহীনতার জন্যই তো দুষ্কৃতীদের এত বাড়বাড়ন্ত। আর সে জন্যই খোদ আলিপুর থানায় গত এক বছরে তিন তিন বার পুলিশ আক্রান্ত হলেও কোনও বারই মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার সাহস দেখাতে পারেননি লালবাজারের কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement