ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতা গৌতম দাস। খেজুরির হলুদবাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।
কোথাও তৃণমূল নেতারা রাতের অন্ধকারে গ্রামে ফর্ম বিলি করছেন বলে অভিযোগ। কোথাও আবার সরকারি শিবিরেই নাকি দেওয়া হচ্ছে মূল আবেদনপত্রের ফটোকপি। লক্ষ্মীর ভান্ডারে এমনই অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ঘোষণা করেছেন ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির ছাড়া আর কোনও জায়গা থেকে সরকারি প্রকল্পের ফর্ম দেওয়া বা নেওয়া যাবে না। সরকারি নির্দেশিকাও তাই। তার পরেও রবিবার রাতে খেজুরি-২ ব্লকের হলুদবাড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ফর্ম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমবার ওই এলাকায় ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হয়। তার আগের রাতেই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য, তৃণমূল নেতা গৌতম দাসকে অন্যদের আবেদনপত্র পূরণ করতে দেখা গিয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ারও।
খবর পেয়ে বিজেপির স্থানীয় নেতারা পৌঁছলে দু’পক্ষের বাদানুবাদ হয়। তখনকার একটি ভিডিয়োয় (সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি) এক জনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘পঞ্চায়েত প্রধান এসে ফর্ম দিয়ে গিয়েছেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন বাসিন্দারও বক্তব্য, প্রধান নিজের হাতে ফর্ম দিয়েছেন। যদিও হলুদবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান তাপসকুমার প্রামাণিকের দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে কিছু জানি না।’’
খেজুরির বিজেপি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিকের অভিযোগ, ‘‘একে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। তার পরে বেছে বেছে শুধু তৃণমূলের লোকেদের ফর্ম দেওয়া হচ্ছিল। বিনিময়ে ৫০০ টাকা করে দিতেও হয় মহিলাদের। বিষয়টি বিডিও-র নজরে এনেছি।’’ খেজুরি-২-এর বিডিও ত্রিভুবন নাথ মানছেন, ‘‘বিধায়কের থেকে জেনে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বেআইনি ভাবে আবেদনপত্র পূরণ বন্ধের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর ওখানে পূরণ করা ফর্ম সোমবারের শিবিরে বাতিল করা হয়েছে।’’
কোলাঘাটের বৃন্দাবনচকেও এলাকায় গিয়ে তৃণমূল নেতারা লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘দলীয় ভাবে ফর্ম বিলি করা হয়নি। কেউ কেউ ফর্মের ফটোকপি বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে থাকতে পারেন।’’ অভিযোগ মানেনি বিডিও তাপস হাজরা।
‘কৃষক সংগ্রাম পরিষদ’ আবার জেলাশাসকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগ জানিয়েছে, কয়েকটি শিবিরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্মের ফটোকপি দেওয়া হচ্ছে। কোলাঘাটের বাঁকাডাঙার বাসিন্দা ডলি জানাও বলেন, ‘‘শিবিরে ফর্মের ফটোকপি দিয়েছে। জানি না টাকা পাব কি না।’’
সরকারি ফর্মে কম্পিউটার জেনারেটেড একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকে। ফর্ম জমার সময় তা মিলিয়ে দেখা হয়। ফটোকপি দিলে তো একই নম্বরের ফর্ম একাধিক ব্যক্তির কাছে থাকবে। তখন সমস্যা হবে বলেই আশঙ্কা। প্রশাসন সূত্রেও খবর, ফর্মের ফটোকপি দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই।