স্বপন সিপিএমের লোক, শুনে থ আনাড়া

দলেরই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। চারদিক থেকে সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ অবধি সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করলেন পুরুলিয়ার পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা বাউরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়া শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০১:৫৩
Share:

সীমাদেবী।—ফাইলচিত্র

দলেরই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। চারদিক থেকে সমালোচনা ও চাপের মুখে পড়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে শেষ অবধি সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করলেন পুরুলিয়ার পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা বাউরি।

Advertisement

পাড়া ব্লকের আনাড়া বাজার এলাকার যে পুরনো তৃণমূল কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দলের নেত্রী সীমাদেবীর বিরুদ্ধে, সেই স্বপন দেওঘরিয়াকে এ বার সিপিএমের কর্মী হিসাবে দাবি করে বসলেন তিনি। বৃহস্পতিবার হোয়াটস অ্যাপের কয়েকটি গ্রুপে নিজের বক্তব্য পোস্ট করে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। সেখানেই স্বপনবাবুকে সিপিএমের কর্মী হিসাবে উল্লেখ করেছেন সীমাদেবী। কিন্তু, এই ঘটনায় তিনি আরও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে স্বপনবাবুর মতো তৃণমূলের আদি ও সক্রিয় কর্মীকে সিপিএম বলে দেগে দেওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পাড়া ব্লকের তৃণমূলেরই একাংশে।

পথ দুর্ঘটনায় আহত, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামীর উদ্দেশে স্বপনবাবু কটূক্তি করেছেন, এই অভিযোগ তুলে বুধবার সকালে আনাড়া বাজারে স্বপনবাবুর দোকানে ঢুকে সীমাদেবী তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে সীমাদেবীকে গ্রেফতারের দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হয়। কংগ্রেস ও সিপিএমের কর্মীদের সঙ্গে সামিল হয়ে তৃণমূলের একাংশও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে ধরার দাবিতে আনাড়ায় পুলিশের ফাঁড়ি ঘেরাও করেন। হয় রাজ্য সড়ক অবরোধ। পুলিশ যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিয়েছিল। যদিও ঘটনা হল, নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হওয়ার দু’দিন পরেও সীমাদেবীকে পুলিশ গ্রেফতার তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি! জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সীমাদেবীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ তবে, শাসকদলের দাপুটে নেত্রী হওয়াতেই পুলিশ তাঁকে ধরার সাহস দেখাচ্ছে না বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সিপিএমের আনাড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক দীপক চৌবে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ হওয়ার পরেও প্রভাবশালী হওয়াতে পুলিশ তাকে ধরছেনা”

Advertisement

এ দিকে, এলাকারই বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে বৃহস্পতিবার সীমাদেবী হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, সেটা করতে গিয়ে তিনি স্বপনবাবুকে চড় মারার কথাও স্বীকার করে ফেলেছেন। বুধবারের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও সংবাদমাধ্যমের একাংশ কুৎসা ও অপপ্রচার করেছে বলে নিজের ‘পোস্টে’ অভিযোগ করেছেন সীমাদেবী। তাঁর দাবি, তাঁর স্বামী বর্তমানে আসানসোলের নার্সিংহোমে চিকিত্সাধীন। এই অবস্থাতেও স্বপন দেওঘরিয়া তাঁর স্বামীর নাম ধরে গালিগালাজ করেন লোকজনের সামনে। সীমাদেবীর এক আত্মীয় তা শুনে তাঁকে সব জানান। বুধবার তিনি ও তাঁর মেয়ে স্বপনবাবুর দোকানে গেলে তাঁদের গালিগালাজ করা হয় বলে সীমাদেবীর অভিযোগ। তখনই তিনি উত্তেজিত হয়ে তাঁকে চড় মারেন।

এই ‘পোস্ট’-এই স্বপনবাবুকে সিপিএমের কর্মী বলে দাবি করেছেন সীমাদেবী। এতে যুগপৎ ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ। আনাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বপনবাবু ও তাঁর দাদা অশোক, দু’জনেই তৃণমূলের আদি কর্মী হিসাবেই পরিচিত। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, কট্টর বাম-বিরোধী এই পরিবারটি তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের সঙ্গে জড়িত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাড়া ব্লকের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘দলের সংগঠন বাড়ানোর পাশাপাশি সীমা বাউরির হয়েও ওই পরিবারটি অতীতে বহু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এখন চাপে পড়ে স্বপনবাবুকে সিপিএম কর্মী হিসাবে সীমাদেবী উল্লেখ করার ফল পরে দলকেই ভুগতে হবে।”

স্বপনবাবু নিজে অবশ্য এই ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সীমাদেবী ও তাঁর মেয়েকে গালিগালাজ করা বা তাঁর স্বামীর দুর্ঘটনা নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগও তিনি মানেননি। শুক্রবার কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পরিবার তৃণমূল কিনা, তার শংসাপত্র সীমাদেবীর কাছ থেকে অন্তত নিতে হবে না! দলের নেতারা ভালভাবেই সব কিছু জানেন।” তাঁর অভিযোগ, সীমাদেবীর মতো দলের কিছু নেতা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এবং তার প্রতিবাদ করাতেই তাঁকে প্রহৃত হতে হয়েছে। সীমাদেবীর অস্বস্তি বাড়িয়ে এ দিন সকালে স্বপনবাবুর সঙ্গে দেখা করেন পাড়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উমাপদ বাউরি, ব্লক সভাপতি রামলাল মাহাতো। স্বপনবাবুর দাবি, ওই দুই নেতাই তাঁকে জানিয়েছেন, সীমাদেবীর কাণ্ড দল সমর্থন করে না। রামলালবাবুও বলেন, ‘‘স্বপন দেওঘরিয়া তৃণমূলের কর্মী বলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।” সীমাদেবী অবশ্য নিজের দাবিতেই অনড়। বলছেন, ‘‘স্বপন সিপিএমেরই কর্মী। ওই ঘটনাকে ঘিরে সিপিএম-কংগ্রেস রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পথে নেমেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement