TMC

৫০ লক্ষ টাকার আধুনিক স্পিড বোট! তহবিলের টাকায় জলযান কিনে বিতর্কে তৃণমূল বিধায়ক

বিলাসবহুল স্পিড বোট কিনে বিতর্কে জড়িয়েছেন গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এলাকা উন্নয়নের জন্য পাওয়া ৬০ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রায় ৫১ লক্ষ টাকাই সুব্রত বোট কিনতে খরচ করেছেন।

Advertisement

  প্রসেনজিৎ সাহা

গোসাবা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৫
Share:

সেই স্পিড বোট। নিজস্ব চিত্র

জলের সমস্যা, পথের সমস্যা, হাসপাতালে পরিষেবা নিয়ে সমস্যা— কিন্তু হলে কী হবে, এলাকায় এসে গিয়েছে ৫০ লক্ষ টাকার আধুনিক স্পিড বোট!

Advertisement

নিজের বিধায়ক তহবিলের টাকায় এ হেন বিলাসবহুল স্পিড বোট কিনে বিতর্কে জড়িয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডল। বিরোধীরা তো বটেই, তাঁর নিজের দলের অনেকেই বলছেন, কাজটা সুবিধার হয়নি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘ভোট এসে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের লোকের কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে এ সব নিয়ে। বোট যে কী কাজে লাগবে, তা বিধায়কই বলতে পারবেন।’’

কী বলছেন বিধায়ক?

Advertisement

কলকাতার গার্ডেন রিচ থেকে এসেছে বোট। ২০ আসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক বোটটি কেনা নিয়ে সুব্রতের যুক্তি, ‘‘দ্বীপাঞ্চলে রোগী ও প্রসূতিদের এই স্পিড বোটে করে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। কার্যত অ্যাম্বুল্যান্স হিসাবে ব্যবহার করা হবে এটিকে। এ ছাড়াও, ভিআইপিরা সুন্দরবনে এলে এই বোটে করে বিভিন্ন দ্বীপে যাতায়াত করতে পারবেন।’’

দ্বীপাঞ্চলে ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজনীয়তার কথা অবশ্য মানেন সকলেই। বছর দেড়েক আগে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের তরফে একটি ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স চালুও করা হয়েছিল। কিন্তু তার জ্বালানির খরচ জোগাড় না হওয়ায় সেটি আপাতত নোঙর গেড়েছে। সুব্রতের তহবিলের টাকায় যে স্পিড বোট এসেছে, সেটি আরও উন্নতমানের। ঘণ্টাখানেক চললে প্রায় ৪০ লিটার পেট্রোল লাগে। যার বাজার দর নয় নয় করেও সাড়ে ৪ হাজার টাকা! ফলে ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স হিসাবে এই নতুন বোটের কার্যকারিতা কত দূর কী হবে— তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই।

২০২১-২২ অর্থবর্ষে এলাকা উন্নয়নের জন্য পাওয়া ৬০ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রায় ৫১ লক্ষ টাকাই সুব্রত বোট কিনতে খরচ করেছেন। এ জন্য দলে আলোচনাও করেননি বলে অভিযোগ গোসাবা ব্লক তৃণমূল নেতা তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডলের। টাকার অভাবে যেখানে দুর্বল নদীবাঁধে মাটি দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে এই ‘বিলাসিতা’র কী অর্থ— প্রশ্ন অনিমেষের।

গোসাবার এসইউসি নেতা চন্দন মাইতির কথায়, “জটিরামপুরের জেটিঘাটের একটা অংশ অনেক দিন আগে তলিয়ে গিয়েছে। বালি জেটিঘাট ভাঙা। গ্রামের বহু রাস্তা খারাপ। দীর্ঘ পথ উজিয়ে বহু গ্রামে লোকজনকে পানীয় জল আনতে যেতে হয়। হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা সামগ্রী নেই। এ সবের দিকে নজর না দিয়ে বিলাসবহুল বোট কেন কেনা হল, তা সত্যিই আমাদের ভাবাচ্ছে!” বিজেপি নেতা বিকাশ সর্দারের কটাক্ষ, “বিধায়কের শখ হয়েছে স্পিড বোটে করে নদীবক্ষে ভ্রমণ করবেন!” রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “বিলাসবহুল স্পিড বোট কোন কাজে লাগবে, তা বিধায়কই জানেন।”

গোসাবা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি কৈলাস বিশ্বাসও এই সিদ্ধান্তে অখুশি। বললেন, “জ্বালানির খরচ জোগাড় করতে না পারায় আগের ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আর এই স্পিড বোট চালাতে ঘণ্টায় প্রায় ৪০ লিটার পেট্রল লাগে। এত খরচ কে দেবে? এটি না কিনে এলাকার অন্যান্য কাজ করলেই ভাল হত।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement