মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বার বার দিল্লির পুলিশ-প্রশাসনকে চিঠি দিয়েও তৃণমূলের কর্মসূচি আয়োজনের অনুমতি মেলেনি বলেই দাবি বাংলার শাসকদলের। এ বার তাই নতুন বিকল্প কর্মসূচি ঘোষণা করল তৃণমূল। শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে বিকল্প ওই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। ওই কর্মসূচি কী ভাবে রূপায়িত হবে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন অন্য দুই মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এবং শশী পাঁজা।
তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, গান্ধী জয়ন্তীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সকল সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা দিল্লির রাজঘাটে প্রার্থনায় বসবেন ২ অক্টোবর, গান্ধী জয়ন্তীতে। চন্দ্রিমা জানিয়েছেন, ওই দিন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে সাক্ষাতের সময়ও চাওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। রাজঘাটে প্রার্থনা সেরে সকলে গিরিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন। বাংলা থেকে ৫০ লক্ষ চিঠি নিয়ে তাঁরা গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী শশী। রাজ্যে যাঁরা ১০০ দিনের কাজ করেও অর্থ পাননি, তাঁরাই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছেন। সেই সব চিঠিই গিরিরাজের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শশী। যদিও, এর আগে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। অভিষেকের নেতৃত্বের ১০০ দিনের কাজের টাকা আদায় করতে গিয়ে মন্ত্রীর দেখা না পেয়েই ফিরে আসতে হয়েছিল তৃণমূল সাংসদদের।
উল্লেখ্য, তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে গত ২১ জুলাই অভিষেক ‘দিল্লি চলো’র ডাক দিয়েছিলেন। ঘোষণা করেছিলেন, গান্ধীজয়ন্তীতে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা-সহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দিল্লির রাজপথে সরব হবেন তাঁরা। দিল্লির রামলীলা ময়দানে অবস্থান-বিক্ষোভের পরিকল্পনাও ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। কিন্তু দিল্লি পুলিশ তার অনুমতি দেয়নি। পরে অভিযোগের সুরেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘২ অক্টোবর দিল্লিতে ধর্না হবে, এই ছিল আমাদের কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিকে সামনে রেখেই আমাদের তরফ থেকে নিয়মমাফিক একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল দিল্লি পুলিশের কাছে। যেখানে বলা হয়েছিল, ২ অক্টোবর আমাদের মূল কর্মসূচি। বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত রামলীলা ময়দান পাওয়ার আবেদন করেছিলাম।’’ এ নিয়ে এর আগেও দিল্লি পুলিশকে চিঠি লিখেছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। শনিবার আবারও চিঠি লিখে দরিয়াগঞ্জ পুলিশের ডিসিকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। সেখানে ডেরেক লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে (মনরেগা) কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য না দেওয়ার প্রতিবাদে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর যন্তর মন্তরের সামনে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্নায় বসতে চান। গত ৩১ অগস্ট এ বিষয়ে আপনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার তরফে কোনও উত্তর না পেয়ে আবার চিঠি লিখছি। অনুরোধ করছি দ্রুত উত্তর দেওয়ার।’’
তৃণমূলের এই কর্মসূচির কথা আগে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে নবান্নের সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি জানিয়েছিলেন, গান্ধীজয়ন্তীতে দিল্লির রাজঘাটে প্রার্থনায় বসবেন তিনি। সঙ্গে থাকবেন অভিষেক-সহ অন্য নেতারা। শনিবার মমতার সেই বক্তব্যকেই তৃণমূল সংগঠনের তরফে ঘোষণা করেছে।