অধ্যক্ষকে দফতরে ফিরিয়ে ক্ষমা চাইছেন বাঁকুড়ার তৃণমূল যুব সভাপতি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
অধ্যক্ষের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া, তাঁকে ঘেরাও করে আস্ফালন তখন তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে এখন রাজ্যের নানা কলেজে যে ধরনের তুলকালাম বাধানোর অভিযোগ কার্যত সমার্থক হয়ে উঠেছে, বাঁকুড়ার সম্মিলনী কলেজে শুক্রবার চলছিল প্রায় তা-ই। আচমকা জল ঢাললেন তৃণমূলেরই এক যুব নেতা। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজী বন্দোপাধ্যায় হট্টগোল থামালেন। ঘরের তালা খুলে অধ্যক্ষের কাছে জোড়হাতে ক্ষমা চাইলেন। ‘এ ভাবে’ আন্দোলন করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারিও দিলেন কলেজের ছাত্র নেতাদের।
শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি শিবাজীর বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়াদের দাবি নিয়ে কলেজে আন্দোলন হতেই পারে। তবে কলেজ অচল করে দিয়ে আন্দোলন চলবে না। তাই হস্তক্ষেপ করেছি।’’
যদিও তৃণমূল সূত্রের দাবি, দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ এবং জঙ্গিপনার বার বার বিরোধিতা করেছেন। তার পরেও গত কয়েক বছরে রায়গঞ্জ, রামপুরহাট থেকে শুরু করে হালে রানিগঞ্জ বা গোপালনগরের কলেজে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে দাপাদাপির অভিযোগ উঠেছে। বারবার একই ধরনের অভিযোগের দৌলতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে ছাত্র সংগঠনের ভাবমূর্তি। তাই শাসক দলের নেতারা শিবাজীকে তড়িঘড়ি কলেজে পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।
দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার জন্য এ দিন ফি জমা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলেজের কোষাধ্যক্ষ বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত না আসায় কিছু পড়ুয়া খেপে ওঠেন। কলেজ সূত্রের দাবি, তখনই আসরে নামেন টিএমসিপি পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদের কিছু নেতা। তাঁরা নোটিস বোর্ড আছড়ে ফেলে, অধ্যক্ষের ধরে তালা লাগিয়ে দেন।
অধ্যক্ষ সমীরকুমার মুখোপাধ্যায় সে সময় ঘরে ছিলেন না। ঘরে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়ে তিনি চলে যান শিক্ষকদের ঘরে। পরে ফিরে এসে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি।
অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘ব্যাপারটা আলোচনাতেই মিটে যেতে পারত!’’ কিন্তু কলেজ সূত্রের দাবি, সমীরবাবুর গলা ঢাকা পড়ে ছাত্র নেতাদের একাংশের গলাবাজিতে। তাঁরা চোখ পাকিয়ে, আঙুল উঁচিয়ে তুলকালাম বাধান বলে অভিযোগ। হট্টগোলে কলেজের কাজকর্ম শিকেয় ওঠে।
সে সময়েই কলেজে ঢোকেন শিবাজী। ছাত্র সংসদের সভাপতি অভ্রজ্যোতি দাসকে ডেকে কার অনুমতিতে এই বিক্ষোভ হচ্ছে জানতে চান তিনি। তখনই ভাটা পড়ে আন্দোলনে। অভ্রজ্যোতি বলতে চেষ্টা করেন, ‘‘ছাত্র সংসদ আন্দোলনে নামেনি। সাধারণ পড়ুয়ারাই প্রতিবাদ করছেন।’’ সে কথা প্রায় কানেই না তুলে অধ্যক্ষের ঘরের তালা খুলে ক্ষমা চান শিবাজী। তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনের পদ্ধতি ঠিক ছিল না। তাই ক্ষমা চেয়েছি।’’ পরে পড়ুয়াদের দাবিদাওয়া নিয়ে তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।
ঘটনায় চমকে গিয়েছেন কলেজের শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘টিএমসিপি-র আন্দোলনের জেরে এর আগে বহু বার অনভিপ্রেত পরিস্থিতি হয়েছে কলেজে। এ দিনের ঘটনাটা ব্যতিক্রম। ভাল ব্যতিক্রম।’’