jangalmahal

Partha Chatterjee: ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’র ২৯ বিঘার খামারবাড়ি জঙ্গলমহলে! রয়েছে টাকা নিয়ে চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ

২০১৩ সালে কুণ্ডু পরিবারের থেকে অতনু মহুলবনি মৌজায় মা মিতা ও ভাই শান্তনুর নামে ২৯ বিঘা জমি কেনেন। দু’বছরে সেখানে মাথা তোলে প্রকাণ্ড খামার।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম, কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২২ ০৬:৫৬
Share:

ঝাড়গ্রামের মহুলবনিতে অতনু গুছাইতের খামারের ভিতরে দক্ষিণেশ্বরের আদলে তৈরি হচ্ছিল মন্দিরও। নিজস্ব চিত্র।

২০২১ সালের জুলাই থেকে তিনি নাকি সপরিবার ফেরার! অথচ গত বছর নভেম্বরে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া অঞ্চলের মহুলবনি মৌজায় প্রকাণ্ড খামারবাড়িতে জাঁকজমক করে কালীপুজো করেছিলেন অতনু গুছাইত। কোলাঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল নেতা অতনুর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে আগেই। গত মাসে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে তমলুক আদালত।

Advertisement

অতনু, তাঁর স্ত্রী মানসী এবং অতনুর ভাই শান্তনু (লাল)— সকলেই নিজেদের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করতেন বলে জানা গিয়েছে। ঝাড়গ্রামের খামারবাড়িতে গত বছরের কালীপুজোয় জঙ্গলমহলের এই জেলার কয়েকজন তৃণমূল নেতা-নেত্রীও এসেছিলেন বলে খবর। সোমবার খামারের দুই কর্মীও মানলেন, গত বছর মালিকরা এখানে কালীপুজো করেছিলেন। বাইরে থেকে কয়েকজন অতিথি এসেছিলেন।

পার্থের গ্রেফতারের পরে ইডির নজর জেলায় জেলায় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেদের বিপুল সম্পত্তির উপরও। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা মানছেন, ২০১৩ সালে স্থানীয় কুণ্ডু পরিবারের থেকে অতনু মহুলবনি মৌজায় মা মিতা ও ভাই শান্তনুর নামে ২৯ বিঘা জমি কেনেন। দু’বছরে সেখানে মাথা তোলে প্রকাণ্ড খামার। ভিতরে ফল ও ফুলের গাছ, ৭টি পুকুর, অতিথিশালা, গো-পালনকেন্দ্র।

Advertisement

‘এবি গ্রিন ফার্ম হাউস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই খামারের মূল গেটে এখন তালা। ডাকাডাকিতে ছোট দরজা খুলে বেরোলেন খামার দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মী মুড়াকাটি গ্রামের অচিন্ত্য চালক ও বাঁধগোড়ার রবি খামরুই। দু’জনেই জানালেন, বছর খানেক বেতন বন্ধ। তবু ৭টি গরু আর ৫টি অ্যালসেশিয়ান কুকুরের জন্যই তাঁরা খামার আগলে রয়েছেন। গরুর দুধ বিক্রির টাকায় গো খাদ্য ও কুকুরদের জন্য মাংস কেনা হচ্ছে। বছর দেড়েক আগে পুকুরের সব মাছ ধরে ঝাড়গ্রাম বাজারে বিক্রি করে দেন মালিকরা। কয়েক বছর আগেও দৈনিক মজুরিতে গ্রামের লোক খামারে কাজ করতেন। এখন সবই বন্ধ।

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে একটি অসম্পূর্ণ মন্দিরও রয়েছে ভিতরে। কর্মীরা জানালেন, চলতি বছরে কালীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। কর্মীরা জানালেন, খামার যখন রমরমিয়ে চলত, তখন স্ত্রীকে নিয়ে আসতেন অতনু। আসতেন অতনুদের মা মিতাও। রাতে অবশ্য কর্মীরা থাকতেন না। তখন অ্যালসেশিয়ানগুলি পাহারা দিত। তবে খামারের ম্যানেজার কোলাঘাটের বাসিন্দা কানাই প্রামাণিক সব সময় থাকতেন। তিনিও বেপাত্তা।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানালেন, ঝাড়গ্রামেও চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলা হয়েছে। টাকা তুলতেন খামারেরই এক কর্মী, তাঁর বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরে। ওই কর্মীর স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী-সহ কয়েক জন আত্মীয় সরকারি ডি গ্রুপের চাকরি পেয়েছেন বলেও দাবি। বাঁধগোড়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি শঙ্কর বেজ বলছেন, ‘‘মালিকপক্ষ মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ বলে শুনেছিলাম। তাই মাথা ঘামাইনি।’’

প্রতারণা মামলায় অতনুর বিরুদ্ধে গত মাসে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে তমলুক আদালত। প্রসেনজিৎ কুইলা নামে এক অভিযোগকারী বলেন, ‘‘আমার বাড়ির চার জনের চাকরির জন্য অতনুকে টাকা দিয়েছিলাম। চাকরি হয়নি। কোলাঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কিছু হয়নি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে অবশ্য বলছেন, ‘‘অতনু গুছাইতের সব ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়েও পাওয়া যায়নি। ওঁকে ধরার চেষ্টা চলছে।’’

(সহ-প্রতিবেদন: দিগন্ত মান্না)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement