TMC IPAC

আইপ্যাককে সঙ্গে নিয়ে বাংলা নববর্ষেই শুরু তৃণমূলের নতুন কর্মসূচি, তৈরি হয়েছে নতুন অ্যাপ, শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণও

গত ২৭ মার্চ নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ভোটার তালিকার ‘ভূত’ তাড়াতে আইপ্যাককে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। কারণ, সেই কাজে সাংগঠনিক কাঠামোর পাশাপাশি প্রয়োজন প্রযুক্তিগত সহায়তাও। সেই মতোই কাজ শুরু করছে তৃণমূল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪২
Share:
TMC is starting voter list rectification work from middle of April, IPAC is cooperating

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাংলা নতুন বছরের শুরুতেই নতুন কর্মসূচিতে নামছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। যে কর্মসূচিতে পুরোদস্তুর জুড়ে থাকছে পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক। ভোটার তালিকার ‘ভূত’ তাড়াতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, আইপ্যাককে সঙ্গে নিয়েই দলের সর্ব স্তরে ভোটার তালিকা ‘সাফাই’ করা হবে। পরামর্শদাতা সংস্থা সূত্রের খবর, মমতার সেই নির্দেশ মেনেই এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে ‘ভোটার তালিকা যাচাই’ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।

Advertisement

মমতার নেতাজি ইন্ডোরের বৈঠকের পরে গত ১৫ মার্চ দলের প্রায় ৪,৫০০ নেতাকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছিল, সেই বৈঠকে অভিষেক বলেছিলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সারা বছরের কর্মসূচি। এক বার করে থেমে গেলে হবে না। শাসকদল সূত্রে খবর, অভিষেক এবং আইপ্যাকের ‘যৌথ’ পরিকল্পনার ফসল হিসাবেই এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে যে কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, তা চলবে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত।

মমতার নেতাজি ইন্ডোরের সভার আগে পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ করছিলেন তৃণমূলের নেতারাই। প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র প্রকাশ্যে আইপ্যাকের বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজি’ করার অভিযোগ করেছিলেন। সেই ঘটনার পরে দলের সর্বোচ্চ স্তরের নির্দেশেই মদনকে ক্ষমা চেয়ে চিঠিও লিখতে হয়েছিল। প্রথমে ইংরেজিতে চিঠি লিখেছিলেন। সেই বয়ান দলের পছন্দ না-হওয়ায় মাতৃভাষা বাংলায় চিঠি লিখে ক্ষমা চান কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক। শ্রীরামপুরের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও আইপ্যাকের কাজে ‘অসততার’ অভিযোগ করেছিলেন। কল্যাণকে যদিও ক্ষমা চাইতে হয়নি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, তার কয়েক মাস আগে তৃণমূল পরিষদীয় দলের বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, কোনও প্যাক-ফ্যাক চলবে না। মমতা আইপ্যাকের নাম না-করলেও কারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী আইপ্যাকের কথাই বলতে চেয়েছেন। সেই বক্তব্য থেকেই অনেকে ধরে নেন, পরামর্শদাদাতা সংস্থার প্রতি রুষ্ট নেত্রী। কিন্তু ইন্ডোরের বৈঠকের ঠিক প্রাক্‌ পর্বে আইপ্যাক কর্ণধার প্রতীক জৈনের সঙ্গে বার দুয়েক একান্ত বৈঠক হয় মমতার।

আগে যা-ই বলে থাকুন, নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘আইপ্যাক নিয়ে কোনও আজেবাজে কথা বলা যাবে না। সবাইকে নিয়েই চলতে হবে।’’ বক্তৃতার শুরুতে দলের সতীর্থদের পাশাপাশি পরামর্শদাতা সংস্থার তরফে উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমার আইপ্যাক।’’ মমতার ওই নির্দেশের কারণ ছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বিধানসবা ভোটের বছর দেড়েক আগে একেবারে আনকোরা কোনও সংস্থাকে নিয়ে এলে তাদের কাজ বুঝতে বুঝতে অনেক সময় চলে যাবে। পক্ষান্তরে, আইপ্যাক ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। ফলে তাদের পশ্চিমবঙ্গে কাজের একটা ধারাবাহিকতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভোটার তালিকা সংশোধনের যে কাজকে তৃণমূল ‘পাখির চোখ’ করেছে, তা বাস্তবায়িত করতে শুধু সাংগঠনিক কাঠামো ব্যবহার করলে হবে না। প্রয়োজন প্রযুক্তিগত সহায়তাও। সেটা আইপ্যাক ছাড়া সম্ভব ছিল না। বাস্তবেও তেমনই হতে চলেছে। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজের জন্য পৃথক একটি অ্যাপ তৈরি করেছে শাসকদল। যার নেপথ্যে রয়েছে পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক।

তৃণমূলের তরফে যে অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, তাতে ‘রিয়েল টাইম ভোটার’ যাচাই, জিও ট্যাগ আপডেট করার বন্দোবস্ত রয়েছে বলে খবর। বুথ স্তরে যাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন, তাঁরাও ওই অ্যাপের মাধ্যমেই তথ্য জানাবেন। ইতিমধ্যেই ‘পঞ্চায়েত ইলেক্টোরাল রোল সুপারভাইজার’, ‘ওয়ার্ড ইলেক্টোরাল রোল ভেরিফিকেশন সুপারভাইজার’, ‘ব্লক ইলেক্টোরাল রোল সুপারভাইজার’ এবং শহরাঞ্চলে ‘টাউন ইলেক্টোরাল রোল ভেরিফিকেশন সুপারভাইজার’ পদে লোক নিযুক্ত হয়ে গিয়েছে। তাঁদের প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে। এমনকি, বুথ স্তরের কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। সেই সমস্ত প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকছেন আইপ্যাকের প্রতিনিধিরাও। কয়েকটি জায়গায় শাসকদলের বিধায়কেরাও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

গোটা কর্মকাণ্ডে দৃশ্যতই ‘কর্পোরেট’ মোড়ক রয়েছে। যা তৃণমূলের সংগঠনে অভিষেকের ছাপকে স্পষ্ট করছে। এবং এ-ও স্পষ্ট যে, মমতার অনুমোদন সাপেক্ষেই নববর্ষে নতুন কর্মসূচি শুরু করতে চলেছে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement