শিল্প চেয়ে পথে। রঘুনাথপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
শিল্পতালুকের জন্য নেওয়া জমি ফেরত চেয়েছেন জমিদাতাদের একাংশ। এ বার পুরুলিয়ার সেই রঘুনাথপুর শিল্পতালুকে শিল্প চেয়ে আসরে নামল তৃণমূল। রবিবার মিছিল করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করলেন, ওই জমিতে শিল্পই করতে হবে। তৃণমূলের নাম না করে মিছিল হয় ‘রঘুনাথপুর ১ ব্লক শিল্প বাঁচাও কমিটি’র নামে। তবে মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন তৃণমূলের রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি-সহ ব্লকস্তরের অন্য নেতারা।
শিল্পতালুকের জমিদাতাদের নিয়ে তৈরি ‘কৃষি কমিটি’ গত মঙ্গলবার রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়ে জানায়, স্থানীয় নতুনডি অঞ্চলে শিল্পতালুক গড়া হবে বলে জমি নেওয়া হয়েছিল। বছর নয়েক পার হলেও সেখানে এখনও কোনও সংস্থাই কারখানা করেনি। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে এখন তাঁরা শিল্পতালুকের জমি ফেরত নিয়ে চাষাবাদ করতে চাইছেন।
কিন্তু বিধায়কের দাবি, ‘‘শিল্পতালুকের জমিতে শিল্প গড়তে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ওখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর হবে বলে সম্প্রতি জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে গিয়েছেন। প্রচুর কর্মসংস্থানও হবে। ওই জমিতে যাতে দ্রুত শিল্প হয়, সেই দাবিতে আমরা মিছিল করেছি।’’ রঘুনাথপুর ১ ব্লকে বাম আমলে ২০০৭-২০১১ সালে ১,৮৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য। জয় বালাজি গোষ্ঠীকে প্রায় ১,২০০ একর জমি সুসংহত ইস্পাত, সিমেন্ট ও ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট’ তৈরির জন্য দেওয়া হয়। কারখানা গড়তে ১০০ একর করে জমি পায় রিলায়েন্স সিমেন্ট ও ইমামি সিমেন্ট। ইমামি প্রকল্প বাতিল করে জমি ফেরত দিয়েছে। রিলায়েন্স সিমেন্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়মিত কাজ চলছে। আর জয় বালাজির তরফে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই জমিতে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ইস্পাতের বাজারে মন্দা ও দুর্নীতির অভিযোগে কয়লা ব্লক বাতিল হয়ে যাওয়ায় কয়লার জোগান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় রঘুনাথপুরে বিশেষ কাজ এগোয়নি।
এ প্রসঙ্গে কৃষি কমিটির নেতারা বলছেন, ‘‘বিধায়ক কী বলছেন জানি না। তবে যাঁরা জমি দিয়েছিলেন, ন’বছরেও শিল্প না হওয়ায় তাঁরা হতাশ। কর্মসংস্থান না হওয়ায় তাঁদের বেশির ভাগই সিঙ্গুরের চাষিদের মতো জমি ফেরত চাইছেন।’’ বিধায়কের পাল্টা দাবি, ‘‘জমিদাতাদের অধিকাংশ এখনও শিল্পই চান। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ রাজ্যের শিল্প গড়ার উদ্যোগকে বাধা দিতে জমি ফেরতের দাবি জানাচ্ছেন। ওঁরা এলাকার উন্নয়ন চান না।’’ প্রশাসনের এক কর্তার সংযোজন, সিঙ্গুরের মতো ‘অনিচ্ছুক’ জমিদাতা এখানে কেউ ছিলেন না। সবাই ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছেন। এটাই সিঙ্গুরের সঙ্গে রঘুনাথপুরের জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে মূলগত তফাত।