ভোট করাতে প্রশাসনিক মদতের আশ্বাস

পুরভোটে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোট করানোর জন্য প্রশাসনিক মদতের আশ্বাস দিয়ে তৃণমূলকে নতুন বিতর্কের মুখে ফেললেন দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে তাঁরা এ ভাবে ভোট করেছেন বলে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে এ দিন দাবিও করেছেন ওই বিধায়ক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪১
Share:

কোচবিহারে নির্বাচনী কর্মিসভায়। শুক্রবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

পুরভোটে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোট করানোর জন্য প্রশাসনিক মদতের আশ্বাস দিয়ে তৃণমূলকে নতুন বিতর্কের মুখে ফেললেন দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে তাঁরা এ ভাবে ভোট করেছেন বলে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে এ দিন দাবিও করেছেন ওই বিধায়ক।

Advertisement

কোচবিহার সদরের সুকান্ত মঞ্চে শুক্রবার দুপুরে জেলার চারটি পুরসভার ৬০টি ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী এবং কর্মীদের সামনে পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘হাত জোড় করে বলছি, সবাই মিলে এক সঙ্গে এককাট্টা হয়ে জোড়া ফুল চিহ্নে ভোটটা দেবেন এবং ভোটটা করাবেন। ভোটটা করার জন্য প্রশাসনিক এবং অন্য যে সব মদত প্রয়োজন হবে, প্রত্যেকটা করব। পঞ্চায়েতে করেছি, লোকসভায় করেছি। যে কোনও মদত করব। কিন্তু জিততে হবে।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘জেতার জন্য যা-যা দরকার তাই-তাই করতে হবে।’’

রবীন্দ্রনাথবাবুর ওই মন্তব্যের পরে বলতে উঠে পার্থবাবু অবশ্য স্পষ্ট করে দেন, ‘‘কোনও প্রশাসনিক মদত আমরা দেব না।’’ তবে বিরোধীরা বলছেন, ‘‘পুরভোটের আগে রাজ্যে শাসক দলের সন্ত্রাসে গণতন্ত্র লুণ্ঠিত। পার্থবাবু মন্ত্রী হিসেবে ঠিক বলেছেন। কিন্তু সেটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো শোনাচ্ছে।’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের মতো কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘‘পুরোটাই নাটক। রবীন্দ্রনাথবাবু অনভিজ্ঞ নেতা নন, যিনি দলের মহাসচিবের সামনে দলের পক্ষে অস্বস্তিকর মন্তব্য করবেন।’’

Advertisement

ওই মন্তব্যের ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নেবে না কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীদের একাংশ। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্ত উপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ হলে তিনি প্রশাসনকে বলবেন ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, ‘‘আমার পূর্ণ বিশ্বাস, কোনও জেলা প্রশাসন রাজনৈতিক দলের নির্দেশে কাজ করবে না। নিজস্ব নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই কাজ করবে।’’ সিপিএম সূত্রের খবর, তারা আপাতত ওই ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করার চেষ্টা করছে।

২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে শীতলখুচি, মাথাভাঙা এবং গত বছর লোকসভা ভোটের সময় তুফানগঞ্জে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ ছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ বার পুরভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে একই ধরনের সন্ত্রাসের অভিযোগকে ঘিরে তেতে রয়েছে কোচবিহারের গ্রাম ঘেঁষা পুর-এলাকাগুলি। বৃহস্পতিবারেও তুফানগঞ্জে বিজেপি কর্মীকে মারধর, সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল। তবে তাদের সঙ্গেই বিরোধীরা আঙুল তুলেছেন পুলিশ-প্রশাসনের দিকেও। হামলার অভিযোগ পেয়েও তারা কার্যত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই অভিযোগ। সেই আবহে রবীন্দ্রনাথবাবুর এ
দিনের মন্তব্যে অন্য তাৎপর্যই খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা।

পার্থবাবু অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘রবি যেমন নিজে লম্বা, তেমন কথা বলে লম্বা। তেমন একটা বলেও ফেলেছে, ‘প্রশাসনিক মদত করব’। কোনও প্রশাসনিক মদত আমরা দেব না। প্রশাসন কীসের জন্য যাবে? প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করবে। প্রশাসন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করবে। আমাদের দলেরও কেউ যদি অভিযুক্ত হয়, অপরাধী হয়— তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে।’’ রাজ্য তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, কর্মিসভার পরে দলের তরফে রবীন্দ্রনাথবাবুকে সতর্ক করা হয়েছে। বার্তা দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের মন্তব্য দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি করে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়।

সভার পরে রবীন্দ্রনাথবাবুও দাবি করেন, ‘‘আমি আসলে বলতে চেয়েছি, বাম আমলে সন্ত্রাস করে ভোট হতো। তৃণমূলের শাসনকালে এই প্রথম পুরভোট হচ্ছে জেলায়। মানুষ স্বাধীন ভাবে যাতে ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা প্রশাসন করবে। প্রশাসন পাশে আছে বলতে সেটাই বোঝাতে চেয়েছি।’’ তবে বিজেপি নেতা শমীকবাবুর দাবি, তৃণমূল ঠিক কী ভাবে ভোট করাতে চায় সেটা নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে যাতে কোনও ধন্দ না থাকে সে জন্য মহাসচিবের উপস্থিতিতেই ‘বার্তা’ দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। এ সব সূত্র ধরেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের মন্তব্য, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে শাসক দল গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, ফের সেটাই স্পষ্ট হয়ে গেল।’’ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের টিপ্পনী: ‘‘তৃণমূলের নেতারা দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে যা বলেন, সেটা প্রকাশ্যে আসাতেই সমস্যা হচ্ছে। এ জন্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে বারণ করেছিলেন দলের নেতাদের।’’

ভোটের প্রচারপর্বে শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হচ্ছে না বলে বারবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ, জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী, বিজেপি-র জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে-রা। যদিও কোচবিহারের এসপি রাজেশ যাদবের দাবি, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা বা শাসক দলের চাপে বিরোধীদের হয়রান করার অভিযোগ শুধু কোচবিহারেই আটকে নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে থানা ঘেরাও করে এ দিন তেমনই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। অভিযোগ মানেননি জেলার এসপি ভারতী ঘোষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement