প্রতীকী ছবি।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার চায়, দেশে লোকসভা ও সব রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে হোক। প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পরে এই প্রস্তাবের উপরে মতামত চেয়ে সব রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় আইন কমিশন। কিন্তু এ রাজ্যের দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও সিপিএম একই সুরে আইন কমিশনে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একসঙ্গে ভোট করা যেতে পারে কি না, তা নিয়ে আইন কমিশন তার নিজস্ব কাঠামোয় একপ্রস্ত আলোচনা করেছে। একত্রে ভোটের আইনি ও অন্যান্য দিক ব্যাখ্যা করে একটি ‘পেপার’ তৈরি করেছে তারা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াও শিক্ষাবিদ, আইনবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের মতামত নিতে চেয়েছে কমিশন। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলিকে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ওই প্রস্তাবের উপরে তাদের মতামত লিখিত ভাবে জানাক তারা। কমিশনে আগামী ৭-৮ জুলাই এই বিষয়ের উপরে শুনানিরও ব্যবস্থা হয়েছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, আর কিছু দিন পরেই যে হেতু আগামী লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে, তাই তার আগেই এই নিয়ে আলোচনার পর্ব সেরে ফেলতে চাইছে আইন কমিশন। যার চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি বি এস চৌহান।
প্রস্তাব যে হেতু মোদী সরকারের, বিজেপি স্বাভাবিক ভাবেই এর পক্ষে। তাদের যুক্তি, একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট করে নিতে পারলে খরচে অনেক রাশ টানা যাবে। কিন্তু তৃণমূল এবং সিপিএম এমন প্রস্তাবের নেপথ্যে সাংবিধানিক কাঠামো ভাঙার চেষ্টা দেখতে পাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে একটি নোট তৈরি করছেন, যা পেশ করা হবে কমিশনে। সেখানে বলা হচ্ছে, সংবিধানের যাবতীয় সংস্থান রাতারাতি বদলে ফেলে একসঙ্গে দেশ ও সব রাজ্যের ভোট করার উদ্যোগ কেন? রাজ্যসভা, লোকসভা ও এক একটি বিধানসভার পৃথক মেয়াদ সংবিধানে স্বীকৃত। মানুষও নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য এক একটি সরকারকে নির্বাচিত করেন। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের সেই স্বীকৃত অধিকার নস্যাৎ করা হবে কোন যুক্তিতে? দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ইচ্ছে হলেই সব কিছু করা যায় নাকি?’’
একই সুরে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও প্রাক্তন সাংসদ নীলোৎপল বসু বলছেন, ‘‘খরচ কমানোর যুক্তি দেখিয়ে আসলে সাংবিধানিক কাঠামো ভাঙার আর একটা চেষ্টা এটা! আধিপত্যবাদী শাসনের এটা আরও একটা দৃষ্টান্ত। আমরা এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধী।’’
সিপিএম কমিশনকে বলবে, ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে লোকসভা ও বিধানসভাগুলির ভোট একসঙ্গেই হয়েছিল। তার পরে কেন্দ্রীয় সরকার এক একটি রাজ্যের সরকার ভেঙে দেওয়া শুরু করতে নির্বাচনের সময়ও আলাদা হয়ে যায়। এখন আবার আইন, কাঠামো ভেঙে পুরনো প্রথায় ফেরত যাওয়ার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। এই মতের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের এক সংসদীয় নেতার মন্তব্য, ‘‘আমরাও একত্রে নির্বাচন করার ২০০% বিরোধী!’’