তৃণমূল

পুণে-যাত্রা হঠাৎ স্থগিত, প্রেসিডেন্সির জের কি

শেষ মুহূর্তে পুণে সফর স্থগিত হয়ে গেল তৃণমূলের! এফটিআইআই-এ পড়ুয়াদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে সোমবার পুণে যাওয়ার কথা ছিল তৃণমূলের তিন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শতাব্দী রায়ের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২১
Share:

শেষ মুহূর্তে পুণে সফর স্থগিত হয়ে গেল তৃণমূলের! এফটিআইআই-এ পড়ুয়াদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে সোমবার পুণে যাওয়ার কথা ছিল তৃণমূলের তিন সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শতাব্দী রায়ের। কিন্তু এ দিন হঠাৎই পুণের বিমান ধরা স্থগিত রেখেছেন শাসক দলের তিন সাংসদ! কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কৌশলে তৃণমূলের প্রতি নরম বার্তা দিয়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের এমন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল অবস্থান বদল করল কি না, চর্চা চলছে তা নিয়েও।

Advertisement

এফটিআইআই-এর আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করে দিয়েও আচমকা পরিকল্পনা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত কেন, তা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি। যার জেরে আরও বেড়েছে জল্পনা! তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক শুধু জানিয়েছেন, তাঁদের সফর পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার পিছনে কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের প্রতিনিধিদল পুণের এফটিআইআই পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া স্থগিত রেখেছে। আশা করছি, পরে কখনও যাওয়া হবে!’’ কয়েক দিন আগে স্বয়ং মমতা টুইট করে দাবি করেছিলেন, এফটিআইআই-এর সঙ্কট কাটাতে কেন্দ্রীয় সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। ছাত্র ও শিক্ষকদের পাশে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই সবার উপরে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এর মাঝে বাধা হয়ে ওঠা উচিত নয়। দলনেত্রীর এই মন্তব্যের পরেই পুণেতে সংসদীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই সিদ্ধান্ত থেকে কেন আবার তাঁরা পিছিয়ে এলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।

আনুষ্ঠানিক ভাবে কেউ মুখ না খুললেও এমন কৌশলগত পিছু হটার নেপথ্যে দু’টি কারণ নিয়ে চর্চা চলছে শাসক দলের অন্দরে। প্রথমত, কয়েক মাস আগে যাদবপুর বা এখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ-আন্দোলনকে ‘অনৈতিক’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন শাসক তৃণমূলের নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাথায় কে থাকবেন, তা ঠিক করার এক্তিয়ার প়়ড়ুয়াদের নয়। সেই জন্যই উপাচার্যদের ইস্তফার দাবি তুলে আন্দোলনকে যুক্তিহীন মনে করছেন তাঁরা। আবার পুণের এফটিআইআই-এর চেয়ারম্যান পদে গজেন্দ্র চৌহানকে বসিয়ে বিজেপি-আরএসএসের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে— এই অভিযোগকে সামনে রেখেই সেখানে পড়ুয়াদের আন্দোলন চলছে। সেই আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে পাছে কলকাতায় তাঁদের প্রেসিডেন্সি নিয়ে উল্টো আক্রমণের মুখে পড়তে হয়, এই আশঙ্কা থেকেই পুণে-যাত্রা স্থগিত রাখা হল বলে তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘নৈতিকতার প্রশ্ন তুললে দু’টোই তো একই গোত্রের। একটার পাশে দাঁড়ালে অন্যটা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে!’’ তৃণমূলের সাংসদেরা পুণে যাবেন ধরে নিয়েই প্রেসিডেন্সি-যাদবপুর নিয়ে এ দিন প্রশ্নও তুলে দিয়েছিলেন এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। সেই আক্রমণের মোকাবিলা না করে তৃণমূল শেষমেশ পুণে যাওয়াই স্থগিত করে দিয়েছে!

Advertisement

যদিও তৃণমূলের মধ্যেই কেউ কেউ বলছেন, টুইটে মুখ খুলে মমতা তো ইতিমধ্যেই এফটিআইআই-প্রশ্নে পড়ুয়াদের সমর্থন করে ফেলেছেন! এই অংশ বরং ব্যাখ্যা দিচ্ছে, লাল থেকে শহরের রং নীল হয়ে যাওয়ার প্রশংসার অছিলায় রবিবারই তৃণমূলকে বার্তা দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলি। তার পরেই এমন কোনও কার্যকলাপে নিজেদের জড়াতে চায়নি তৃণমূল, যা কেন্দ্রের বিজেপি পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement