West Bengal Panchayat Election 2023

লক্ষ্মীর ভান্ডার নিয়ে দড়ি টানাটানি শুভেন্দু-অভিষেকে, এক জন দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি, অন্য জন জানাচ্ছেন চ্যালেঞ্জ

রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। এ বিষয়ে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয়েছে নেতাদের মধ্যে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৩
Share:

শুভেন্দু অধিকারী-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

রাজ্য সরকারের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। বিজেপির প্রতিশ্রুতি, রাজ্যে তারা ক্ষমতায় এলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের অঙ্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করা হবে। অন্য দিকে, শাসকের চ্যালেঞ্জ, ক্ষমতায় থাকা ১২ রাজ্যের যে কোনও একটিতে বিজেপি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালু করে দেখাক। দড়ির এক প্রান্তে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্য প্রান্তে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

শুভেন্দু ইদানীং পঞ্চায়েতের প্রচারে বেরিয়ে বিভিন্ন সভায় তুলে ধরছেন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র কথা। সোমবারও ধূপগুড়িতে তিনি বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই কথা বলতে শোনা গিয়েছে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও। যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’কে এত দিন বিজেপি ‘খয়রাতির রাজনীতি’ বলত সেই প্রকল্পকেই এ বার তারা প্রচারের আলোয় নিয়ে আসায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক তো প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জও ছুড়ছেন। সোমবার পুরুলিয়ার সভার পর মঙ্গলে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থেকেও বিজেপির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিনি। অভিষেক বলেন, ‘‘এখন সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে শুভেন্দু অধিকারী প্রতিযোগিতা করে বলে বেড়াচ্ছে, এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে, সব মহিলাকে ২০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। একটা সময় বিজেপির নেতারা এই লক্ষ্মীর ভান্ডারকে ভিক্ষা বলে আক্রমণ করতেন।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বর্তমানে দেশের প্রায় ১২টি রাজ্যে বিজেপির সরকার রয়েছে। তার একটিতেও বিজেপি লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প চালু করে দেখাক। ২০০০ টাকা নয়, ১০০০ টাকা দিয়েই দেখান, যে আপনাদের এ বিষয়ে আন্তরিকতা রয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ইস্তাহারে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র প্রথম উল্লেখ করে তৃণমূল। সেখানে বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয় বার দায়িত্ব পেলে রাজ্যের সব মহিলাকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে অনুদান দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পর ওই বছরের ২ মে মমতার প্রত্যাবর্তনের পরেই ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ চালু করার উদ্যোগ শুরু হয়। সাধারণ মহিলাদের ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে মাসে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পরে তা চালুও হয়েছে।

Advertisement

রাজনীতির বৃত্তে ঘোরাফেরা করেন যাঁরা, তাঁদের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী গত ১২ বছরের শাসনকালে একাধিক সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের সূচনা করেছেন। কিন্তু ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ বাংলায় যে সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিঘাত তৈরি করেছে, তা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষেই ‘এড়িয়ে যাওয়া’ সম্ভব নয়। তাই যে বিজেপি বছরখানেক আগে পর্যন্ত তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে আক্রমণ শানাত, তাদেরই এখন ক্ষমতায় এলে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র অনুদান ২০০০ টাকা করার বার্তা দিতে হচ্ছে। আর এই বিষয়টিকেই তুলে ধরে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সবচেয়ে বেশি প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। এক দিকে, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র সুফল শাসকদল এই নির্বাচনেও তাদের ভোট বাক্সে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্য দিকে, সেই কৌশলকেই ভবিষ্যতে নিজেদের দিকে ঘোরানোর চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি। তবে রাজনীতির বৃত্তের কাছাকাছি থাকা ওই অংশের মতে, এই বিষয়ে তৃণমূল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বিজেপির থেকে। কারণ হিসাবে তাদের মত, তৃণমূল যে হেতু আগে শুরু করেছে, তাই সুফলের ভাগ তারাই বেশি পাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement