নুরজাহান বিবি। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে আবার নারী নিগ্রহের অভিযোগ। এ বারে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে। সেখানে বৃহস্পতিবার সিপিএমের এক পরাজিত মহিলা প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।
সিপিএমের অভিযোগ, খেজুরি-১ ব্লকের লাখি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ বারের দলীয় প্রার্থী নুরজাহান বিবিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁর পরনের শাড়ি ছিঁড়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হলেও গ্রামবাসীর বাধায় তা আর হয়নি। হেঁড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ গিয়ে নুরজাহানকে উদ্ধার করে। এখন তিনি কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী শেখ জব্বরের নেতৃত্বেই এই ঘটনা। যদিও তা অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নুরজাহান আগে তৃণমূল করতেন। বছর কয়েক হল সিপিএমে যোগ দিয়েছেন। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে লাখি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৮ নম্বর বুথে তাঁকে প্রার্থী করে সিপিএম। তবে হেরে যান। তার পর থেকে নুরজাহান ঘরছাড়া ছিলেন। বুধবার রাতে বাড়ি ফেরেন। নুরজাহানের অভিযোগ, ‘‘বুধবার রাতেই তৃণমূলের লোকজন বাড়ি এসে বলে যায়, বাইরে বেরোনো যাবে না। তাও বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে যাই। তখনই জব্বরের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা প্রকাশ্য রাস্তায় আমার উপর চড়াও হয়। গলা টিপে ধরে। শাড়ি ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে প্রচণ্ড মারধর করে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওরা আমার গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। লোকজন চলে আসায় আর পারেনি।’’
দলীয় কর্মীরা প্রথমে হেঁড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান নুরজাহানকে। অবস্থার অবনতি হলে আনা হয় কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে শয্যা না মেলায় মেঝেয় চিকিৎসা চলছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাসের অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্রার্থীকে প্রথমে ব্যালটে কারচুপি করে হারানো হয়। তার পরে বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূল। শেষে উদাখালি বাজারে প্রকাশ্যে তাঁকে মারধর করা হয়। পুড়িয়ে মারার চক্রান্তও চলছিল।’’ খেজুরি-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিমান নায়কের দাবি, ‘‘টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলার জেরে নুরজাহানের সঙ্গে কিছু ঘটেছে বলে শুনেছি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সিপিএম নাটক করছে।’’
অন্য দিকে, খেজুরি-২ ব্লকের অরকবাড়ি গ্রামে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রতিমা মণ্ডলের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তাপস দোলুই অবশ্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের মদতে প্রলাপ বকছে সিপিএম। গোটা রাজ্যে আমরাই আক্রান্ত।’’
দু’টি ঘটনাতেই রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ হয়নি। হিমাংশু বলেন, ‘‘মৌখিক ভাবে প্রশাসনকে সব জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগও হবে।’’ কাঁথির এসডিপিও সোমনাথ সাহার আশ্বাস, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।’’