হামলায় জখম বিশ্বজিৎবাবুর মা সাধনা ঘোষ।— নিজস্ব চিত্র
পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতি নয়। সাধারণ এক গ্রাম পঞ্চায়েত। তবে, তা সিপিএমের হাতে। সেই পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে আনতে দিনেদুপুরে পাইপ বেয়ে বাড়িতে ঢুকে এক সদস্যকে পিস্তল দেখিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
কাটোয়ার সুদপুর পঞ্চায়েতের ওই সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষের দাবি, এর আগেও তাঁকে দল ছাড়ার কথা বলে হুমকি দিয়েছে শাসকদল। তাঁর অভিযোগ, রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ চারটে মোটরবাইকে সশস্ত্র অবস্থায় জনা ১২ যুবক আসে। তারা সকলেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী। বাড়ির বাইরে তাঁর দাদা নবকুমার দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকে মারধর করে হামলাকারীরা ভিতরে ঢুকতে যায়। কিন্তু বাড়ির মহিলারা সমস্ত গ্রিল, দরজা বন্ধ করে দেন। তখন পাইপ বেয়ে দোতলায় উঠে পড়ে কিছু দুষ্কৃতী দোতলায় উঠে নীচে নেমে দরজা খুলে দেয়। দোতলাতেই ছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। তাঁর অভিযোগ, সেখানে ওঠার আগে ‘কাকা কোথায়’ জানতে চেয়ে নবকুমারবাবুর মেয়েকে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। বিশ্বজিৎবাবুর মা সাধনাদেবী, স্ত্রী সুলক্ষণাদেবী কোনও রকমে বছর দশেকের মেয়েটিকে সরিয়ে নিয়ে যান। তখন তাঁদেরও মারধর করা হয়।
বিশ্বজিৎবাবুর বাবা সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘ছেলেকে সাদা কাগজে সই করাতে চাইছিল ওরা। রাজি না হওয়ায় মাথায় পিস্তল ঠেকায়। বাধ্য হয়ে সই করে দেয় ছেলে।’’ এর পরে হামলাকারীরা লুঠপাট চালিয়ে বেশ কয়েক ভরি সোনায় গয়না, টাকাপয়সাও নিয়ে যায় বলে তাঁদের অভিযোগ। পরে সাধনাদেবী ও বিশ্বজিৎবাবুর ভাইঝিকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সুদপুর পঞ্চায়েতটি বরাবরই সিপিএমের। ১৯ জন সদস্যের মধ্যে ১২ জন সিপিএমের। ৬ জন কংগ্রেসের ও এক জন তৃণমূলের। বিধানসভা ভোটের পরে অবশ্য সবুজের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো জেগে থাকা সুদপুরের ছয় কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। সিপিএমের অভিযোগ, গত ২৬ জুন সুদপুর তাহেরপাড়া মোড়ে সিপিএম-কংগ্রেস যৌথ সমাবেশে হামলা চালানো হয়। একাধিক সদস্যকে হুমকি দেওয়া তো চলছিলই। সুদপুর গ্রামেরই বাসিন্দা, কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সহ-সভাপতি মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘সুদপুর সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। তা ভাঙার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।’’ দলের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘টাকার লোভ দেখানো, হুমকি চলছিল। এ বার বাড়িতে সশস্ত্র ভাবে ঢুকে মহিলা, শিশুদের হুমকি দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যকে সই করতে বাধ্য করানো হল।’’ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নিতাই মাঝির দাবি, তাঁকেও দলত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।
যদিও তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের কিছু পঞ্চায়েত সদস্য নিজেরাই তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন। কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই। প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’ কাটোয়ার এসডিপিও সচিন মাঁকড় বলেন, ‘‘কয়েক জনের নাম পেয়েছি। পুলিশ চার জনকে গ্রেফতারও করেছে। তল্লাশি চলছে।’’