তিন বোন। তিন জনই হারিয়ে গিয়েছিল। একজন বছর ছয়েক আগে। দু’জন মাস চারেক আগে। মেদিনীপুরের হোমে ফের দেখা হয়ে গেল তিন জনের। সোমবার হারিয়ে যাওয়া তিন মেয়েকে দেখতে হোমে এসেছিলেন বাবা-মা। বাবা স্বপন মুর্মু (নাম পরিবর্তিত) বলছিলেন, ‘‘খোঁজ তো কম করিনি। এতদিনে বোধহয় ভগবান মুখ তুলে দেখলেন।’’ মা লতা (নাম পরিবর্তিত) বললেন, ‘‘আজ পৃথিবীর সব চেয়ে খুশি মা আমিই।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার বাসিন্দা স্বপন পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী লতাও দিনমজুরি করেন। তাঁদের সাত সন্তান। চার মেয়ে, তিন ছেলে। ২০১৩-র মার্চে হারিয়ে যায় তাঁদের এক মেয়ে সীমা (নাম পরিবর্তিত)। তখন তার বয়স ৯। সীমাকে উদ্ধার করে পুলিশ চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেয়। পরে সিডব্লিউসি-র (চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি) নির্দেশে ঠাঁই হয় হোমে। নিজের বাবা মায়ের নাম বা বাড়ির ঠিকানা, কিছুই বলতে পারেনি সীমা। হোম থেকে তার আধার কার্ড করে দেওয়া হয়। আধার কার্ডে ছিল হোমের ঠিকানাই।
চলতি মার্চে একদিন বাড়ি থেকে বেরোয় স্বপন ও লতার আরও দুই মেয়ে রেখা মুর্মু (নাম পরিবর্তিত) ও পাতা মুর্মু (নাম পরিবর্তিত)। বাড়ি ফেরেনি তারাও। ১১ বছরের রেখা এবং ৯ বছরের পাতাকেও পুলিশ উদ্ধার করে চাইল্ড লাইনে তুলে দেয়। একই ভাবে তারাও পৌঁছয় মেদিনীপুরের রাঙামাটির ওই হোমে।
পাতা মূক-বধির। হোমে থাকার সূত্রে সীমার সঙ্গে দেখা হয় রেখার। রেখা জানায়, তার এক দিদি ৬ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছে। সীমাও জানায়, সে ৬ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল। পরিচয় গাঢ় হয়। একদিন রেখা জানায়, এই হোমেই রয়েছে তার আরেক বোন পাতা। ছোটবেলায় এই বোন পিঠে খুন্তির ছেঁকা খেয়েছিল। সে দাগ এখনও রয়েছে। এ কথা শুনেই বিস্মিত হয় সীমা। সীমা জানায়, তার ছোট বোনেরও পিঠে খুন্তির ছেঁকার দাগ রয়েছে। রেখা বুঝতে পারে, এই সীমাই তার হারিয়ে যাওয়া দিদি। তারা বিষয়টি হোমের দিদিমণিদের জানায়।
রেখা বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা বলে। তাই রেখাদের উদ্ধারের বিষয়টি তার পরিবারে জানানো হয়। তবে পরিবারের তরফে সিডব্লিউসি-র কাছে দুই মেয়েকে হোমে থাকতে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অনুরোধে সাড়া দেয় সিডব্লিউসি। বিষয়টি জেনে হোম কর্তৃপক্ষ সিডব্লিউসিকে জানান। হোম কর্তৃপক্ষ খবর পাঠান বাড়িতে। এ দিন স্বপন-লতা হোমে পৌঁছে জানান, সীমাই ছ’বছর আগে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুর সিডব্লিউসি-র চেয়ারম্যান শান্তনু ভুঁইয়া বলছিলেন, ‘‘তিন বোনের জীবনের গল্পটা যেন সত্যিই সিনেমার মতো।’’