জিতলেন তিন জন মিলে, হারলেনও

তিন বীরের লড়াই দেখল কোচবিহার। বীর-ই বটে। ওঁরা জন্মাষ্টমীর বীর। মদনমোহন বাড়িতে এক ডাকে সবাই চেনেন তাঁদের। জন্মাষ্টমীতে ‘দধিকাদা’য় লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন ওই তিন জন। সুদেব কার্জি, অনাথচন্দ্র কার্জি এবং উৎপলচন্দ্র দাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৩৫
Share:

মদনমোহন মন্দিরের সামনে ‘দধিকাদা’ খেলছেন তিন ‘বীর’। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

তিন বীরের লড়াই দেখল কোচবিহার। বীর-ই বটে। ওঁরা জন্মাষ্টমীর বীর। মদনমোহন বাড়িতে এক ডাকে সবাই চেনেন তাঁদের। জন্মাষ্টমীতে ‘দধিকাদা’য় লড়াইয়ের ময়দানে থাকেন ওই তিন জন। সুদেব কার্জি, অনাথচন্দ্র কার্জি এবং উৎপলচন্দ্র দাস। রবিবার বিকেল ৪টেয় জন্মাষ্টমীতে ‘দধিকাদা’য় তাঁদের লড়াই দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিক সবাই এক ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে দেখে লড়াই দেখেছেন ওই তিন জনের। শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন তিন জনই। হারলেনও তিন জনই। মুহূর্মুহূ পড়ল হাততালিও। শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত পুজোর পরে ‘দধিকাদা’ উৎসব ঘিরে জন্মাষ্টমীতে মেতে উঠল গোটা কোচবিহার। তা দেখে অভিভূত সুদেববাবুরা।

Advertisement

তাঁরা বলেন, “আসলে লড়াইটা যখন শুরু করি তখন কেমন যেন জেদ চেপে যায়। তাই লড়াইয়ে হারতে ইচ্ছে করে না। আর মন্দিরে ভক্তদের সমাগম আমাদের আরও উৎসাহিত করে।” দধিকাদা দেখতে আসা জেলা প্রশাসনের এক প্রাক্তন আধিকারিক বলেন, “দধিকাদা আমি প্রথম দেখলাম। তিন জনই প্রাণপণে লড়ছিল। খুব ভাল লেগেছে আমার।” মন্দিরের রাজ পুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্জ বলেন, “মদনমোহন বাড়ির জন্মাষ্টমী ঘিরে এমনিতেই মানুষের মধ্যে একটা আবেগ রয়েছে। রাতে পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভক্তরা অপেক্ষা করে থাকে। দধিকাদা দেখতেও ভিড় করে।”

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রের খবর, মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় মদনমোহনবাড়িতে। রাজ পুরোহিত জানান, শনিবার দিনের বেলাতে পুজো হয়েছে মদনমোহনের। রাতে সাড়ে ৮টা থেকে বিশেষ পুজো শুরু হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত ওই পুজো চলেছে। হয়েছে যজ্ঞ। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা ওই পুজোতে উপচে পড়েছিল ভক্তদের ভিড়। তাঁরা ঠায় বসে থেকে পুজোয় যোগ দিয়েছেন। ভোগ প্রসাদ হিসেবে ছিল লুচি ও মিষ্টান্ন। শহরের বাসিন্দা দেবাশিস ভট্টাচার্য নামে এক ভক্ত ওই পুজোয় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সাড়ে তিন ঘন্টাই স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সেখানে ছিলেন। পুজো শেষ হওয়ার পরে বাড়ি ফেরেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রতি বছর পুজোয় অংশ নিই। ওই পুজো ঘিরে আমাদের আবেগ রয়েছে। আমার তো খুব ভাল লাগে। এখন ছেলেমেয়েরাও ওই দিনে যেতে চায় মন্দিরে। তাই সবাইকে নিয়ে যাই।”

Advertisement

শুধু দেবাশিসবাবুই নন, এমন বক্তব্য অনেকের। মন্দিরের কর্মীরা জানান, ওই রাত একটু অন্য রকম। অন্য দিন পুজো তাড়াতাড়ি শেষ হয়। যাদের ডিউটি শেষ হয়ে যায় তাঁরা বাড়ি ফিরে যায়। ওই দিন সবাই ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মন্দিরে। সকালে ওঠেই ছুটে আসা তাঁরা। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় দধিকাদা খেলার প্রস্তুতি।

পুরোহিত জানান, দধিকাদায় পাঁচটি ফল নিয়ে খেলতে হয়। ওই খেলা হয় কাদার মধ্যে। মন্দিরের সামনের একটি অংশ কাদা করে নেওয়া হয়। সেখানে নারকেল, বাতাবীলেবু, আপেল, মোসাম্বি, ন্যাসপাতি নিয়ে যাওয়া হয়। বাজতে থাক ঢাক। পুরোহিতও ছিলেন সেখানে। প্রচুর মানুষ ভিড় করে। ঢাকের আওয়াজ শুরু হতেই আসরে নেমে পড়েন তিন জন সুদেব কার্জি, অনাথ কার্জি এবং উৎপল দাস। এক জন একটি করে ফল নেন আর কাদার মধ্যে ঢুকিয়ে চেপে ধরেন। আরেকজন ওই ফল কেড়ে নিতে জীবন পণ করে লড়তে শুরু করেন। দু’জনের লড়াই তুঙ্গে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ঢাকের আওয়াজও। তিন জন ঘুরে ঘুরে ওই খেলা খেলেছেন। তাতে ফল চেপে রাখতে পারেননি কেউই। উল্টো দিকের আরেক জন ফল ছিনিয়ে নিয়ে জয়ী হয়েছেন। ফলে জয়ী হয়েছেন তিন জনই। আবার হেরেছেন তিন জনই। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “প্রতি বছরই সুদেব, অনাথবাবুরা ওই খেলায় অংশ নেন। শুধু নিয়ম পালন নয়, মন ও প্রাণ দুটো দিয়েই খেলেন তাঁরা। তাই তো সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement