আইএমএ-র রাজ্য শাখার বৈঠকে ধুন্ধুমার। ছবি: সংগৃহীত।
সামনেই সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার নির্বাচন। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি বৈঠক শুরু হতেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অভিযোগ, সেই বৈঠকে দুই লবির মধ্যে ঝামেলা বাঁধে। তিন চিকিৎসককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েক জন। শেষ পর্যন্ত বৈঠক থেকে বার করে দেওয়া হয় তাঁদের। তার পরই শুরু হয় ওই বৈঠক।
উল্লেখ্য, রবিবার পার্ক সার্কাসে আইএমএ-এর রাজ্য শাখার বৈঠক ছিল। এই সংগঠনের বিভিন্ন পদে কারা মনোনয়ন জমা দেবেন, তা নির্ধারণ করতে রবিবারের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠক শুরুর আগেই ধুন্ধুমারকাণ্ড বেঁধে যায়। চিকিৎসক তাপস চক্রবর্তী, জয়া মজুমদার এবং প্রিয়ঙ্কা রানাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অন্যান্য চিকিৎসকেরা। ওঠে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও।
অভিযোগ, এই তিন চিকিৎসক ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ। আরজি করের মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ ওঠে। সেই সব অভিযোগের নেপথ্যে বার বার উঠে আসে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র কথা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এবং প্রাক্তন আরএমও অভীক দে-র নামও প্রকাশ্যে আসে। ‘থ্রেট কালচার’ নিয়ে অভীকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এমনকি, আরজি কর-কাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে তাঁদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, তাঁরা আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ।
সেই ঘটনার পর থেকেই বিরূপাক্ষদের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বিরূপাক্ষদের সঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় চিকিৎসক তাপসের। তিনি আইএমএ-র মালদহ শাখার সভাপতিও ছিলেন। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের পর তাঁকে সেই পদ থেকে অপসারণ করা হয়। অভিযোগ, আরজি করের ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তাপস। কেন তিনি হঠাৎ সেখানে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কোনও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাতেই তাপস আরজি করের সেমিনার হলে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই বিতর্কের মধ্যে তাঁকে আইএমএ-র পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
রবিবারের বৈঠকে সেই তাপসকে দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আইএমএ-র রাজ্য শাখার একাংশ। তাপস জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ। বৈঠকে যোগ দিতেই তিনি এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। অভিযোগের তির আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। যদিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার মুহূর্তে এ বিষয়ে শান্তনুর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। শুধু তাপস নন, জয়া এবং প্রিয়ঙ্কা নামে দুই মহিলা চিকিৎসককেও রবিবার বৈঠকে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বিরূপাক্ষের ‘বন্ধু’ বলে পরিচিত প্রিয়ঙ্কা। জয়া স্বাস্থ্য দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাঁরা ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র সঙ্গে যুক্ত— এই অভিযোগ তুলেই আইএমএ-র রাজ্য শাখার বৈঠকে বিক্ষোভ দেখানো হয়।