Cyclone Dana

ঝড়জলের রাত মন্দিরে জেগে কাটালেন অর্চনা

বছর দশেক আগে নাকি বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছিলেন গঙ্গাসাগরে। জিজ্ঞেস করলে তেমনই বলেন। সেই থেকে এখানেই আছেন অর্চনা গোলদার। বছর পঞ্চাশের মহিলা কপিলমুনির মন্দির চত্বরেই থাকেন।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

সাগর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৫৭
Share:

মন্দির চত্বরে অর্চনা। —নিজস্ব চিত্র।

অন্ধকারে সমুদ্রের তীব্র গর্জন কানে আসছিল। তার উল্টো দিকে কপিলমুনির আশ্রম। সেখানেই দেখা পেলাম তাঁর। রাত তখন সাড়ে ১২টা পেরিয়েছে। ওড়িশায় ভূমিস্পর্শ করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। এক পাশে জড়সড় হয়ে হাওয়ায় কাঁপছেন তিনি।

Advertisement

বছর দশেক আগে নাকি বাংলাদেশ থেকে চলে এসেছিলেন গঙ্গাসাগরে। জিজ্ঞেস করলে তেমনই বলেন। সেই থেকে এখানেই আছেন অর্চনা গোলদার। বছর পঞ্চাশের মহিলা কপিলমুনির মন্দির চত্বরেই থাকেন। মন্দিরে ঝাড়ু দেন। মন্দিরের প্রসাদ যে দিন যেমন জোটে, তা-ই খেয়ে দিন গুজরান হয়। মাঝেমধ্যে ভক্তেরা কেউ খেতে দেন। মন্দিরের চাতালে শুয়েই বহু ঝড়-দুর্যোগ দেখেছেন অর্চনা। তবে মন্দির ছেড়ে যাননি কোনও দিন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অর্চনা অন্ধকারে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে গর্জন শুনতে শুনতে বলছিলেন, তিনিই কপিলমুনি মন্দিরের পাহারাদার!

Advertisement

ঝড়জলের মধ্যেও তাই অর্চনা মন্দির চত্বরেই বসেছিলেন। রাত গভীর হতে বাতাসের শোঁ-শোঁ শব্দ বেড়েছে। একটা সময় দমকা হাওয়ায় মন্দির চত্বরে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। হাওয়া ধাক্কা দিচ্ছিল মন্দিরের দরজায়। মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। বৃষ্টিতে ভিজে ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁপছিলেন। অনেক বলাতেও অন্যত্র যেতে চাননি। বলেন, “এমন কত দুর্যোগ চোখের সামনে দেখেছি। এই মন্দিরের বারান্দাতেই ছিলাম। আমার কিছুই হয়নি। এ বারও কিছু হবে না। কপিলমুনি বাবা আমাকে রক্ষা করেন।”

কথায় কথায় অর্চনা জানান, তাঁর এক মেয়ে ছিল। বছর বারোর সেই মেয়েটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এখন কেউ নেই। মন্দিরই তাঁর ঘরবাড়ি। তবে সেখানে অন্য ভিক্ষুক মহিলারা তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ অর্চনার। তার পরেও তিনি বলেন, “তাও এখানেই থাকব।”

মন্দির থেকে একটু দূরে কয়েকটি দোকান। আশপাশে বসতি। নিশুতি রাতে তীব্র হাওয়ার মধ্যে সব যেন স্তব্ধ। জল চাই। অর্চনা কিছু দাঁতে কাটেননি রাতে। দোকান অনেক ঠেলাঠেলি করে খোলানো গেল। মিলল বিস্কুট। তা নিয়েই মন্দির চত্বরে ফিরলেন মহিলা। প্রবল বেগে তখন প্রকৃতি ঝাঁপিয়ে পড়ছে সাগরের কিনারায়।

নিজেকে গুটিসুটি করে মানিয়ে নিয়ে বসতে বসতে অর্চনা বললেন, “কী আর হবে! মরলে এখানেই মরব!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement