—প্রতীকী ছবি।
পদার্থবিদ্যার অতিথি-শিক্ষক চাই। এ জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে এমএসসি, বিএড। পারিশ্রমিক দেওয়া হবে মাসে ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ দিনে ১০০ টাকা। এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের দৈনিক মজুরিই সম্প্রতি ২৩৭ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করা হয়েছে।
ফলে হুগলির পুরশুড়ার চিলাডাঙি রবীন্দ্র বিদ্যাবীথির (উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়) এই বিজ্ঞপ্তিতে শোরগোল পড়েছে।
বিতর্ক সামাল দিতে সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে টিচার ইনচার্জ সন্দীপ প্রামাণিক বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন শূন্যপদে নিয়োগ নেই। পঠনপাঠনের স্বার্থেই অতিথি-শিক্ষক নিতে হয়। ওই শিক্ষককে সপ্তাহে ২-৩ দিন পড়াতে হবে, সেটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না করাই ভুল হয়েছে। ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে সমাজমাধ্যমে।’’ তিনি আরও জানান, অতিথি-শিক্ষক নিয়োগে সরকারি কোনও বরাদ্দ নেই। পড়ুয়াদের টিউশন ফি থেকে তৈরি স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকেই সাম্মানিক দেওয়া হয়। স্কুলের সভাপতি দিলীপকুমার জানার মন্তব্য, ‘‘জানি, সাম্মানিকের অঙ্ক খুবই কম। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ নিরুপায়। স্কুলে তিন জন অতিথি-শিক্ষক আগে থেকেই আছেন। সংখ্যাটি চার হচ্ছে।’’
প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেড মাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আরামবাগের ডহরকুন্ডু শ্রীরামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার নায়েকের বক্তব্য, ‘‘অনেকে হয়তো ভাবছেন, ওই বিজ্ঞপ্তি সরকারি এবং সরকার বেতন দেবে! বিজ্ঞপ্তিতে ‘আংশিক সময়ের শিক্ষক’ লেখা থাকলে বিভ্রান্তি হত না।’’ খানাকুলের অতুল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিত আঢ্য, পুরশুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌম্যজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘এমন বিজ্ঞপ্তি সাধারণত নিজেদের এবং পাশাপাশি স্কুলের নোটিস বোর্ডে দিয়ে থাকি আমরা, যাতে বেকার প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা সুযোগ পান। এই বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ্যে এসে যাওয়াতেই হইচই বেধেছে!’’
পুরশুড়ার ওই স্কুলের টিচার ইনচার্জ পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি নিয়ে এখন সহশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন বিদ্যুৎকুমার দাস। তিনি জানান, এই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে শুধু পদার্থবিদ্যাই নয়, জীববিদ্যা, অঙ্ক, সংস্কৃতেরও শিক্ষক নেই। বিদ্যুৎ জানান, অঙ্ক করান এক পার্শ্বশিক্ষক। সংস্কৃত পড়ান এলাকার এক অতিথি-শিক্ষক। তাঁকে, জীববিদ্যা, শারীরশিক্ষার অতিথি শিক্ষককেও দু’হাজার টাকা দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বলেন, “এর বেশি আমাদের সঙ্গতি নেই।”
বিদ্যালয় সূত্রে খবর, প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুলে পড়ুয়া হাজারের উপরে। শিক্ষকদের খেদ, শিক্ষা দফতর উচ্চ মাধ্যমিকের অনুমতি দিলেও পরিস্থিতি ঢাল-তলোয়ারহীন সৈনিকের মতো। এক শিক্ষকের মতে, “শিক্ষক নিয়োগ দরকার। শিক্ষা দফতরে চিঠি লিখেও ফল হয়নি।”
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “স্কুলগুলি যে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় অতিথি শিক্ষক নিচ্ছে, তা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে। এই বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।”
শিক্ষক সংগঠনগুলি মনে করছে, দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ায় এই অবস্থা। অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, “মাসে ৩০০০ টাকা মানে দৈনিক ১০০ টাকা। ১০০ দিনের কাজের মজুরির থেকেও কম। এক জন এমএ, বিএড যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের বেতন এ রকম হতে পারে!”
পারে তো বটেই।
গত শুক্রবার ওয়াক-ইন ইন্টারভিউয়ে যান দুই চাকরিপ্রার্থী। তারপর পদার্থবিদ্যার অতিথি শিক্ষক হিসেবে যাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি আড়াই হাজার টাকায় পড়াতে রাজি হয়েছেন!