প্রতিবাদী বলেই বিমান দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আমাকে খুনের চক্রান্ত হয়: মমতা

নোট বাতিলের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের সুর ছিলই। বলেছিলেন, তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে ভরলেও কিছু আসে যায় না। এমনকী, তাঁকে গুলি করে মারলেও তিনি ভয় পান না। এ বার প্রকাশ্য সমাবেশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাঁকে খুন করার চেষ্টা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২০
Share:

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সামনে ধর্নায় মমতা। বুধবার। ছবি: প্রদীপ আদক।

নোট বাতিলের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের সুর ছিলই। বলেছিলেন, তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে ভরলেও কিছু আসে যায় না। এমনকী, তাঁকে গুলি করে মারলেও তিনি ভয় পান না। এ বার প্রকাশ্য সমাবেশের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় তাঁকে খুন করার চেষ্টা হচ্ছে।

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা দফতরের সামনে তৃণমূলের তিন দিনের ধর্নার শেষ লগ্নে বক্তৃতায় বুধবার মমতা বলেন, ‘‘বিমান দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আমাকে মারার চেষ্টাও করেছে এরা! চক্রান্ত করে! কোনও রকমে বেঁচে গেলাম!’’ গত নভেম্বরে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে বিহারে সভা করে ফেরার সময়ে কলকাতা বিমানবন্দরে মমতার বিমান সময়মতো অবতরণ করতে পারেনি। আধঘণ্টারও বেশি আকাশে চক্কর কাটে তাঁর বিমান। ওই বিমানে মমতার সঙ্গেই ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

পরে তৃণমূল নেত্রী টুইট করে ঘটনাটির তদন্ত দাবি করেন। তৃণমূল নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিরও দ্বারস্থ
হন। মমতা নিজে বিধানসভায় বিষয়টির তদন্ত দাবি করেন। তদন্তে অবশ্য পাইলটদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। যদিও মমতা এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্র তথা বিজেপি-র প্রতিহিংসার প্রসঙ্গ
টেনেই বলেছেন, ‘‘এটিসি বলেছে এর দোষ, ওর দোষ! দু’জন পাইলটকে সাসপেন্ড করল। পুলিশ তো তদন্ত করতে গিয়ে কোনও কাগজই পেল না! খুব বিপজ্জনক!’’

Advertisement

বিরোধী শিবিরের একাংশ অবশ্য মনে করছে, রোজভ্যালি-কাণ্ডে সিবিআইয়ের ফাঁস যখন আবার তৃণমূলের উপরে চেপে বসছে, সেই সময়ে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র পাশাপাশি খুনের চক্রান্তের অভিযোগ এনে সহানুভূতির হাওয়া টানার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে কারণে মমতার দাবি শুনে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আগে তো উনি কথায় কথায় বলতেন, সিপিএম ওঁকে খুন করতে চায়! এখন বিমান দুর্ঘটনার কথা বলছেন! বিজেপি-কে টানছেন।’’

মমতা এ দিন বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় বিজেপি তাঁকে প্রাণে মারার চক্রান্ত করছে। তাঁর দলের সাংসদদেরও ‘মিথ্যা অভিযোগে’ গ্রেফতার করছে। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাপস পালকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও এখনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি বলে দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্র-বিরোধিতায় মুখর তৃণমূলকে ‘নরম মাটি’ ভেবে বিজেপি এ ভাবে আক্রমণ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে তৃণমূল কোনও ভাবেই যে কেন্দ্রের কাছে পর্যুদস্ত হবে না, তা আবার স্পষ্ট করে মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল ঊর্বর মাটি। পারলে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে লড়ে আসুন!’’ কেন তাঁর দলের একের পর এক নেতাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেই মমতা ফের প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কী করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, শোভন, ববি? আমি জানি একটা একটা করে নাটকের অঙ্ক এগুলো!’’

গত সপ্তাহে সুদীপবাবু গ্রেফতার হওয়ার পরে এই নামগুলোই শোনা গিয়েছিল মমতার মুখে। এঁদের এখনও সিবিআই নোটিস পাঠায়নি। তা হলে কেন বারবার মমতা এঁদের নাম তুলছেন, তা নিয়ে দলের ভিতরে-বাইরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে বোঝাতে চাইছেন, দলকে নিশানা করার জন্যই প্রথম সারির একের পর এক নেতাকে ফাঁসানো হচ্ছে। যদিও বিরোধীদের পাল্টা মত, সিবিআইয়ের সন্দেহের তালিকায় আছে বলেই ঘুরেফিরে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ওই নামগুলো শোনা যাচ্ছে! বিজেপি-র রাহুলবাবুর কটাক্ষ, ‘‘চুরি করবে আর চোর ধরা পড়লেই অপরের দোষ! এটা তো দুর্ভাগ্যজনক।’’

তাঁর দলের নেতাদের নিয়ে উদ্বেগ বোঝাতে এ দিন মমতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বিজেপি-র গভীর চক্রান্তের অভিযোগও এনেছেন। একটি হুমকি-ফোনের ভিত্তিতে তমলুক থানায় সম্প্রতি শুভেন্দু অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার পরেই বিজেপি-র শাখা সংগঠনের স্থানীয় এক নেতা শুভেন্দুকে হুমকি দিচ্ছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দুকে বলছে দেখা করতে। দেখা না করলে তার পরিণাম ভাল হবে না বলেও হুমকি দিচ্ছে! কত বড় সাহস!’’ শুভেন্দু এ দিনই কেন্দ্রের প্রতিহিংসার দিকে ইঙ্গিত করে উত্তরবঙ্গে বলেছেন, ‘‘আরও কিছু নেতা-কর্মীকে অত্যাচার সহ্য করতে হবে। শেষ জয় কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই হবে!’’

দিল্লিতে তিন দিনের ধর্না শেষে এ দিনই রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদেরা। নোট-কাণ্ডে এই নিয়ে তৃতীয় বার। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরে তৃণমূলের মুখ্য জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘দেশে মহাজরুরি অবস্থা চলছে! সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও এখানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সিবিআই তাঁর পিছনে পড়েছে। আমাদের আরও কিছু নেতার বিরুদ্ধেও একই ভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement