প্রতীকী চিত্র।
টিকা নিতে গিয়ে এ ভাবে ফিরে আসতে হবে ভাবিইনি! হাফপ্যান্ট পরে গিয়েছি বলে টিকা দিল না। টিকা পাওয়ার যোগ্যতা কোনও বিশেষ পোশাক হতে পারে!
বাড়িতে বাবা অসুস্থ। দু’বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। তাঁকে বাড়িতে একলা রেখেই শুক্রবার বয়স্ক মা-কে নিয়ে দুপুর ৩টে নাগাদ রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার বড়াল কার্যালয়ে টিকা নিতে গিয়েছিলাম। কুপনও ছিল আমাদের হাতে। কিন্তু টিকা শিবিরে ঢুকতে যেতেই পুরসভার কিছু লোক এবং স্থানীয় কয়েক জন আমাদের আটকে দিলেন। কারণ, আমি নিয়মবিরুদ্ধ পোশাক পরে এসেছি। আমায় বলা হল, ‘‘হাফপ্যান্ট পরে ঢোকা যাবে না।’’ তখনও জানি না, কী ব্যাপার। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘হাফপ্যান্ট পরে ঢোকা যাবে না কেন? এখানে তো কোনও পোশাকবিধি থাকার কথা নয়।’’ তখন আমাকে বলা হল, ‘‘ভিতরে গিয়ে দেখুন, নোটিস টাঙানো রয়েছে। দেখে চুপচাপ বাড়ি চলে যান।’’ অত্যন্ত অপমানিত বোধ করলাম।
তা-ও ভিতরে গেলাম। দেখলাম সত্যিই তাই। এক গাদা পোস্টার টাঙানো। তাতে লেখা, ‘হাফপ্যান্ট পরিধান অবস্থায় প্রবেশ নিষেধ’, ‘অশোভনীয় বা দৃষ্টিকটু পোশাক পরে পৌরসভায় প্রবেশ নিষিদ্ধ’ ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত আমায় ওঁরা টিকা নিতে দিলেন না। তা-ও আমি মা-কে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম। মা-ও অসুস্থ ছিলেন। কিছু ক্ষণ পর পিছনে দাঁড়ানো এক মহিলা মা-কে ভিতরে নিয়ে গিয়ে ওঁদের অনুরোধ করতে বললেন আমায়। সেটাই করলাম। তখন অবশ্য মা-কে টিকা দেওয়া হয়েছে।
আমার মা ভিতরে যেতেই দেখলাম খালি গায়ে এক যুবক টিকা নিয়ে বেরিয়ে এলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গেই পাশে দাঁড়ানো এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘খালি গায়ে টিকা নিতে আসা বৈধ, আর হাফপ্যান্ট পরে আসা অবৈধ?’’ জবাব এল, ‘‘তুমি এখানে ঝগড়া করতে এসেছ নাকি?’’ মা বেরিয়ে আসতে তাঁকেও বললেন, ‘‘আপনি আপনার ছেলেকে কিছুই শিক্ষা দেননি!’’ লাইন থেকে উটকো মন্তব্য উড়ে এল, ‘‘এর পর তো অন্তর্বাস পরে আসবে।’’
এ কোন সমাজ! এ ভাবে নীতি-পুলিশের উদ্যাপন হয় নাকি আজকাল কোথাও? বয়স্ক, অসুস্থ মানুষের সঙ্গেও এঁরা এই রকম ব্যবহার করবেন? টিকা না পেয়ে ফিরে আসতে হল শুধুমাত্র আমি হাফপ্যান্ট পরে গিয়েছিলাম বলে! শুধু তাই নয়, আমাকে মানসিক ভাবে হেনস্থাও করা হয়েছে। অপমানিত লাগছে খুব। কোথায় অভিযোগ জানাব, বুঝতে পারছি না।