গঙ্গাসাগরে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
সমালোচনা আসছে নানা মহল থেকে। গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যৎ এখনও আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে। তবে মেলা প্রাঙ্গণে কোভিড বিধি নিয়ে কয়েক দিন আগেও যেমন ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছিল প্রশাসনের তরফে, তা কিছুটা হলেও বদলেছে বৃহস্পতিবার।
গত কয়েক দিন ধরে ভিন্ রাজ্যের বহু মানুষকে ভিড় করে কপিলমুনি মন্দিরে ঢুকে পুজো দিতে দেখা গিয়েছে। এ দিন মন্দিরের প্রবেশপথে থার্মাল চেকিং হয়েছে। মন্দিরের সামনে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েনি। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের। বেশি ক্ষণ সেখানে ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না। মাস্ক না পরে থাকলে কাউকে মন্দিরে ঢুকতেও দেওয়া হয়নি। মেলা প্রাঙ্গণে জায়গায় জায়গায় মাস্ক বিলি করতেও দেখা গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে।
পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, এখন প্রতিদিন গড়ে হাজার দশেক পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে আসছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি দিনের দিন পুজো দিয়ে ফিরেও যাচ্ছেন। নামখানার নারায়ণপুর থেকে লঞ্চে করে প্রতিদিন হাজার তিনেক মানুষ সাগরের চেমাগুড়ি দিয়ে গঙ্গাসাগরে আসছেন। ভিড়ের মধ্যে এত দিন অনেককেই মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছিল না বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে গত কয়েক দিন ধরে লাগাতার প্রচারে কিছুটা হলেও হুঁশ ফিরেছে মানুষের। যদিও গণ পরিবহণে দূরত্বববিধি এ দিনও চোখে পড়েনি।
কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাটে কাকদ্বীপ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দিন স্বেচ্ছাসেবকদের শিব ও দুর্গা সাজিয়ে পুণ্যার্থীদের মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কচুবেড়িয়া ভেসেল ঘাটে বসানো হয়েছে স্যানিটাইজ়ার টানেল। আধ ঘণ্টা অন্তর স্বেচ্ছাসেবকেরা ভেসেলঘাট চত্বরে জীবাণুনাশ করছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাগর ব্লকে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা একটি বৈঠক করেন। লট ৮ থেকে শুরু করে গঙ্গাসাগর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে। নামখানার নারায়ণপুর থেকে লঞ্চে সাগরের চেমাগুড়ির বেনুবন দিয়ে গঙ্গাসাগরে আসা যায়। সে পথেও নজরদারি রাখা হচ্ছে। সমুদ্রে নেমে যাতে কেউ স্নান না করেন, সে জন্য মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।
তবে এর ফাঁকে-ফোঁকরে স্নান সেরেও নিচ্ছেন অনেকে। রাজস্থান থেকে এসেছেন গোবিন্দ পরাশর। বললেন, ‘‘মেলার সময়ে ভিড় বাড়বে। তাই আগে আগে এসে পুণ্যস্নান সেরে মন্দিরে পুজো দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। যে ভাবে কোভিড বাড়ছে, তাতে ভিড়ের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল।’’ গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হরিপদ মণ্ডল জানান, কোভিড বিধি মেনে মেলা হলে কোনও অসুবিধা নেই। এ জন্য সমস্ত দফতরের আধিকারিক-কর্মী তো বটেই, সাগরের বিভিন্ন পঞ্চায়েতগুলিকেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
গঙ্গাসাগর মেলা কাকদ্বীপ মহকুমার মধ্যে পড়ে। ইতিমধ্যে নামখানার দ্বারিকনগর গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ ও সাগর গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। দু’জনেই বিচ্ছিন্নবাসে আছেন বলে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
তবে ভিন্ রাজ্যের লক্ষাধিক পর্যটক গঙ্গাসাগরে এলে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কায় আছেন স্থানীয় মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা, কলেজ শিক্ষক অসীমকুমার মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘‘সরকার বলছে এক জায়গায় ৫০ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না। গঙ্গাসাগর মেলায় কি ৫০ জনের কম লোক হয়?’’