CPM

‘দুর্জয় ঘাঁটি’ বাংলার মাটি অতীত, কংগ্রেসের মতো হাতেগোনা ঘাঁটি-এলাকাও নেই আর, চিন্তায় সিপিএম

বামেদের ভোট কংগ্রেসের থেকে বেশি হলেও তা নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় পুঞ্জীভূত নয়। সিপিএমের নেতাদের বক্তব্য, এই ছড়িয়ে থাকা ভোট রাজনৈতিক ভাবে ইতিবাচক হলেও, আসন জেতার জন্য তা যথেষ্ট নয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭
Share:

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এবং সিপিএম রাজ্য সম্পদক মহম্মদ সেলিম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আবার একটা ভোট আসছে। গত লোকসভা এবং বিধানসভা— দুই বড় ভোটেই বাংলায় খাতা খুলতে পারেনি সিপিএম। সামনের লোকসভা ভোটেও একক শক্তিতে আসন জেতার কোনও আশা দেখা যাচ্ছে না। মাত্র দু’দশক আগেও গোটা বাংলা যাদের ‘দুর্জয় ঘাঁটি’ বলে ভূ-ভারতে পরিচিত ছিল, সেখানে ‘সিপিএমের এলাকা’ বলে এখন এক-আধটা বিধানসভাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেন এই পরিস্থিতি হল? কী ভাবে এর থেকে পরিত্রাণ? রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর এক যুগ পরে দাঁড়িয়ে এটাই এখন সিপিএমের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। সিপিএম নেতৃত্বের আলোচনায় বার বার যা ফিরে আসছে তা হল— যেটুকু ভোট দলের এখনও রয়েছে, সেটুকুও রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় জেতার মতো ভোটঘনত্ব নেই।

Advertisement

মঙ্গলবার থেকে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়ে গেল আলিমুদ্দিনে। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে পঞ্চায়েত বা ধূপগুড়ি নির্বাচন যেমন ছিল, তেমনই ছিল সাংগঠিক কর্মসূচি সংক্রান্ত কথাবার্তা। বৈঠকে সে সব নিয়ে আলোচনা হলেও, রাজ্য নেতাদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় উদ্বেগ ফুটে উঠেছে এই ‘ছন্নছাড়া’ ভোটব্যাঙ্ক নিয়েই। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠকের মাঝে মধ্যাহ্নভোজের সময় উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জন নেতা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেছেন, ‘কংগ্রেসের তবু এখনও গড় রয়েছে। আমাদের নেই।’

বামেদের ভোট কংগ্রেসের থেকে বেশি হলেও তা নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় পুঞ্জীভূত নয়। এখনও যা ভোট বামেদের দিকে রয়েছে, ২০২১-এর পর থেকে দক্ষিণবঙ্গে যেটুকু ভোট বেড়েছে, তা সবটাই ছড়ানো। সিপিএমের নেতাদের বক্তব্য, এই ছড়িয়ে থাকা ভোট রাজনৈতিক ভাবে ইতিবাচক হলেও, আসন জয়ের জন্য তা মোটেই যথেষ্ট নয়। কংগ্রেসের ভোটের বড় অংশ মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরে অনেকটা ঘনীভূত জায়গায় রয়েছে। যা তাদের আগামী লোকসভা ভোটেও সুবিধা দিতে পারে। সিপিএমের রাজ্য মম্পাদকমণ্ডলী তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী এই ভোট ছড়িয়ে থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েই বলেন, ‘‘মানুষের আস্থা ফিরে পেতে আমাদের সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনও পথ নেই। তবে এটাও বাস্তব, পঞ্চায়েত ভোটে এত সন্ত্রাসের মধ্যেও রাজ্যের অনেক ব্লকে আমাদের ভোট ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে।’’

Advertisement

সম্প্রতি ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিএমের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে গিয়েছে। সেখানে আবার কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে লড়েছিল সিপিএম। প্রাথমিক ভাবে দেখা যাচ্ছে, উত্তরবঙ্গে সিপিএম স্থবির হলেও দক্ষিণবঙ্গে তাদের ভোটবৃদ্ধির হার তুলনামূলক ভাল। শান্তিপুর, বালিগঞ্জের বিধানসভা উপনির্বাচনে তার ইঙ্গিত মিলেছে। সাগরগিঘিতে সিপিএমের সমর্থন নিয়ে জয় পেয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী। সিপিএমের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, লোকসভা ভোটে আসন ধরে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলে, ভাল ভাবে বোঝাপড়া করে মুর্শিদাবাদ ও রায়গঞ্জে গুরুত্ব দিয়ে, জেতার মতো করে লড়ার পক্ষপাতি। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে সিপিএমের দু’জন সাংসদ ছিলেন। রায়গঞ্জ থেকে মহম্মদ সেলিম ও মুর্শিদাবাদ থেকে বদরুদ্দোজা খান। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে শেষ মুহূর্তে কংগ্রেসের বোঝাপড়া ভেস্তে যাওয়ায় রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ হারিয়ে শূন্য হয়ে যায় সিপিপিএম।

অন্য দিকে, কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়ে সে বারই সিপিএম দু’টি আসনে প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থেকেছিল। দেখা যায়, সেই বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ আসন জিতেছে কংগ্রেস। সিপিএমের নেতাদের আশঙ্কা, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে তত বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি মেরুকরণ তীব্র হবে। যার সঙ্গে যুঝে ওঠা মুশকিল। তাই সিপিএমের একটা বড় অংশের নেতারা চাইছেন, আর কিছু হোক না হোক, অন্তত মুর্শিদাবাদ আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে মসৃণ বোঝাপড়া করতে। তবে সংখ্যালঘু ভোট সেখানে বড় ফ্যাক্টর। লোকসভা ভোটে যখন বিজেপি সামনে চলে আসবে, তখন সংখ্যালঘুরা ‘নিরাপদ জায়গা’ পেতে চাইবেন বলেও মত অনেকের। আবার রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, অন্য জেলার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ, মালদহের সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক বিন্যাসের ফারাক রয়েছে। তবে সিপিএমের অনেক নেতাই চাইছেন, কয়েকটি আসনকে চিহ্নিত করে লোকসভা ভোটে লড়াই করা হোক। বিরাট কোনও প্রত্যাশা নয়, শূন্যস্থান পূরণ করাই এখন দলের প্রথম লক্ষ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement