মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ বার প্রথম জেলায় জেলায় তার আয়োজন হল। ফাইল ছবি
কেউ বলছেন বাড়তি খরচ। কারও যুক্তি, এত অল্প সময়ে আয়োজন সম্ভব নয়। কারও আবার দশমীতে বিসর্জনই রীতি।
এমনই নানা কারণে জেলায় জেলায় দুর্গাপুজোর কার্নিভালে যোগ দিল না বেশ কিছু বড় পুজো, এমনকি সরকারি পুরস্কার প্রাপ্ত পুজোও। তাতে কিছুটা হলেও তাল কাটল পুজো শেষের এই উৎসবে।
কলকাতায় কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে পুজো কার্নিভাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ বার প্রথম জেলায় জেলায় তার আয়োজন হল। শুক্রবার সেই উপলক্ষ্যে হাওড়া, হুগলি, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া—সর্বত্র সদর শহরের পথঘাট সেজে উঠল। প্রতিমা নিয়ে সুসজ্জিত ট্যাবলো বেরোল, হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জমল ভিড়। যানজট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত রইল পুলিশ। বর্ধমান শহরে কার্নিভালে এসেছিলেন অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে।
তবে অনেক পুজোই কার্নিভালে ছিল না। বাঁকুড়ায় সেরা পুজোর পুরস্কার প্রাপ্ত খাতড়া নারী শক্তি ক্লাব যেমন দশমীতেই প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে। পুজো কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি বলছেন, ‘‘৫০ কিমি দূরে বাঁকুড়ায় প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সমস্যা ছিল। তিন দিন ধরে মণ্ডপে প্রতিমা রাখতে খরচ আরও বাড়ত। খারাপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিও ছিল।’’ বীরভূমের সদর সিউড়িতেও পুজোর কার্নিভালে ছিল না অধিকাংশ বড় পুজো। শহরের চৌরঙ্গী ক্লাবের তরফে দেবাশিস ধীবর বলেন, ‘‘এই স্বল্প সময়ে আলাদা ভাবে কার্নিভালের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়।’’ সিউড়ির আনন্দপুর সর্বজনীনের সমর্পণ ভট্টাচার্যের যুক্তি, ‘‘যখন যেতে বলা হয়েছে, তখন প্রতিমা গাড়িতে তোলার লোক আসেন না। সময়টা সন্ধ্যা সাতটা হলে ভাবা যেত।’’ মেদিনীপুর শহরের কর্নেলগোলা আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির সম্পাদক তীর্থঙ্কর ভকত জানালেন, ‘‘অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রাচীনতম পুজো আমাদের। দশমীতেই প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে।’’
কার্নিভাল জমেনি নদিয়া-মুর্শিদাবাদেও। রানাঘাটে নদিয়া জেলার কার্নিভালে এক ডজন পুজোর থাকার কথা থাকলেও শেষমেশ এল ৮টি। তার মধ্যে ৬টিরানাঘাটেরই পুজো, দু’টি ফুলিয়ার। নদিয়ায় সবচেয়ে বড় পুজো হয় কল্যাণী ও বাদকুল্লায়। সেগুলির বেশিরভাগের প্রতিমা এ দিন বিসর্জন হলেও তারা কেউ কার্নিভালে জায়গা পায়নি। কার্নিভালের উদ্বোধনে রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, প্রথম বার বেশি বড় আয়োজন করা যায়নি। মুর্শিদাবাদের কার্নিভালেও ছিল শুধু বহরমপুরের ১২টি পুজো। কুলপিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কার্নিভালেও আসেনি কয়েকটি পুজো। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “কার্নিভালেযোগ দিতে গাড়ি ভাড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ অতিরিক্ত ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সে জন্যই কিছু কমিটি শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গিয়েছে।”
এ বার বনগাঁয় আর বিসর্জনের কার্নিভাল হয়নি। পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলার হেডকোয়ার্টারে কার্নিভাল হচ্ছে। তাই বনগাঁয় কার্নিভাল বন্ধ রেখেছি।”