যুবককে মাটিতে ফেলে কঞ্চির ছড় দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন তৃণমূল নেতা জেসিবি। ভিড়ের আড়ালে পড়ে রয়েছেন ওই তরুণীও। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
চোপড়ায় যুগলকে রাস্তায় ফেলে পেটানো তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করে ইসলামপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে খবর।
রবিবার দুপুরেই তৃণমূলের চোপড়ার নেতা তাজম্মুল ওরফে ‘জেসিবি’র একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিয়োয় দেখা যায় এক তরুণীকে রাস্তার মধ্যে ফেলে এক ছড়া কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারছেন জেসিবি। মার খেতে খেতে গুটিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। তার পরে আবার শুরু হচ্ছে মার। একইসঙ্গে এক তরুণকেও একই ভাবে মারতে দেখা যায় তাঁকে (ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন )। তবে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছিল রাজ্যের বিরোধীরা। পরে ইসলামপুরের পুলিশ সুপারও জানান, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে। তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযানও শুরু হয়েছে এলাকায়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় জেসিবিকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে ইসলামপুর জেলা পুলিশের তরফে একটি টুইট করে জানানো হয়, ‘‘চোপরা থানা এলাকার এক মহিলাকে নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল ভুল তথ্য ছড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করে এবং অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেসিবি ওরফে তাজম্মুল রবিবার চোপড়া এলাকাতেই ছিলেন। পুলিশি অভিযানে তিনি গ্রেফতার হন। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার ইসলামপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হবে তাঁকে।
যে ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার চোপড়ার ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হল, সেটি দিন দুয়েক আগে ঘটেছিল চোপড়া থানা এলাকার লক্ষ্মীপুরে। অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস কে। তবে তৃণমূলকে এ বিষয়ে তৎপর হতে দেখা যায় রবিবার, ঘটনাটির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে।
সূত্রের খবর, এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হতেই উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমরা চাই জেসিবিকে গ্রেফতার করা হোক।’’ তার কয়েক ঘণ্টা পরেই গ্রেফতার হন এলাকার তৃণমূল নেতা জেসিবি। যদিও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি, তাঁরা এই নিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ না করলে চোপড়ার ওই তৃণমূল নেতা এই কাণ্ড ঘটানোর পরেও গ্রেফতার হতেন না। মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূলের ছত্রছায়াতেই এর বেড়ে ওঠা। কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন, হামিদুল খুব পাওয়ারফুল। হামিদুলের ঘনিষ্ঠ এই কাজ করছে, আর তৃণমূল জানে না এটা হতে পারে না। এখন যেই হইচই হচ্ছে, গ্রেফতার করে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সবাই জানে পাড়ায় পাড়ায় এমন ‘জেসিবি’দের পুষছে তৃণমূল।’’
রবিবার দুপুরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়ও।সেলিম ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘‘সালিশি সভাও নয়। অপরাধের বিচার এবং শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। যার ডাকনাম জেসিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এ ভাবেই বিচার ব্যবস্থাকে দুরমুশ করা হচ্ছে চোপড়ায়।’’ পরে একই ভিডিয়ো পোস্ট করে মালবীয় লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে থাকা বাংলার কুৎসিত মুখ।... প্রত্যেক গ্রামেই সন্দেশখালি রয়েছে।’’
এর পরেই ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসতে থাকে ঘটনাপরম্পরা। জানা যায়, ভিডিয়োর জেসিবি যে মহিলাকে মাটিতে ফেলে মারধর করছিলেন তিনি বিবাহিত। তবে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে তাঁরা ফিরে এলে দু’জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বলা হয় ওই অর্থ না দিলে তাঁদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না। সেই ‘জরিমানা’ না দেওয়াতেই তাঁদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়।’’
বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, জেসিবি এলাকায় অসামাজিক কাজ করে বেড়ান। তাঁর বিরুদ্ধে এক সিপিএম নেতাকে খুন-সহ বহু অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তার পরেও যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি, তার একমাত্র কারণ, জেসিবি চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ। রবিবার এই ঘটনার সূত্রে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল হামিদুলের সঙ্গেও। তিনি স্বীকার করে নেন, ঘটনাটির কথা। একই সঙ্গে জানান, জেসিবি ওরফে তাজম্মুল এলাকায় তৃণমূলের হয়েই কাজ করেন। যদিও গ্রেফতারির প্রসঙ্গে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওই মহিলা যদি ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তবে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে তাজম্মুলকে।’’ রবিবার রাতে অবশেষে গ্রেফতার করা হল জেসিবিকে।