SSC Recruitment Case

চাকরি থাকুক যোগ্যদের, আশা ওঁদেরও

বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় (৪৯৫) উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা সৌম্যদীপ সাহা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৪ ০৯:৩৪
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

“শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতিকে যাতে কোনও অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেওয়া না হয়, সেটা দেখা জরুরি। শিক্ষায় দুর্নীতি ঢুকে পড়লে, সেটা কখনওই ভাল খবর হতে পারে না। কারণ, শিক্ষাই ভবিষ্যতের নাগরিক গড়ে দেয়,” বলছেন অভীক দাস। উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম স্থান (৪৯৬) পাওয়া আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়াম হাই স্কুলের ছাত্র অভীকের দীর্ঘদিনের অভ্যাস, নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া। ফলে, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষায় ‘দুর্নীতি’ থেকে শুরু করে নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলতে থাকা হিংসার বিষয়ে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।

Advertisement

তাই অভীক বলেন, “যোগ্যেরা যেন এক জনও কোনও অবস্থায় ভুক্তভোগী না হন। যেন সসম্মানে চাকরি ফিরে পান তাঁরা। সেই সঙ্গে চাইব, অযোগ্যেরা যাতে কোনও ফাঁক দিয়ে ঢুকে না যান। দু’পক্ষ মিশে গেলে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।” নিউ আলিপুরদুয়ার মোড় লাগোয়া পূর্ব আনন্দনগরের বাড়িতে বসে বুধবার দুপুরে অভীক বলছিলেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স বা নিট-এর মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষা যেমন স্বচ্ছ ভাবে হয়, তেমনই স্বচ্ছ হওয়া উচিত স্কুলে নিয়োগের পরীক্ষাও। তাঁর বাবা প্রবীর দাসও স্কুল শিক্ষক। আলিপুরদুয়ার জংশন রেলওয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ান। তিনি বলেন, “সব বিষয়েই খুঁটিয়ে জানার আগ্রহ ওর।” মা শ্যামলী দাস গৃহবধূ। বলছিলেন, “ছোট থেকেই অভীককে পড়াশোনা নিয়ে আলাদা করে বলতে হয় না কখনও।” মাধ্যমিকে চতুর্থ হওয়ার পরে জেদ চেপে গিয়েছিল, পরের বার আরও ভাল ফল করতে হবে। এ বারে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে (মেনস) অভীক সর্বভারতীয় স্তরে ৪৫৪ র‌্যাঙ্ক করেছেন। আগামী দিনে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে বা কলকাতার আইআইএসইআর-এ পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স নিয়ে পড়ে বিজ্ঞানী হতে চান।

বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় (৪৯৫) উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা সৌম্যদীপ সাহা। শিক্ষকদের পরামর্শে বেছে নিয়েছিলেন অর্থনীতি (ইকনমিক্স), সংখ্যাতত্ত্ব (স্ট্যাটিসটিক্স), অঙ্ক, কম্পিউটার সায়েন্সের মতো বিষয়। সৌম্যদীপ বলেন, “এই বিষয়গুলিতে ভাল নম্বর ওঠে। তবে ঠিক মতো পড়াশোনা করলে, যে কোনও স্ট্রিমেই সফল হওয়া সম্ভব।” সৌম্যদীপজানান, আগামিদিনে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে চান। পড়াশোনার বাইরেসৌম্যদীপ ভালবাসেন খেলাধূলা করতে, গল্পের বই পড়তে। আবৃত্তি চর্চা করতেও ভাল লাগে তাঁর।বারাসতে রেডিমেড কাপড়েরদোকান চালান সৌম্যদীপের বাবা ভোলানাথ সাহা। তিনি বলেন, “নিজে এক সময় নরেন্দ্রপুরে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। আর্থিক কারণে হয়ে ওঠেনি। ছেলেকে পড়াতে পেরে স্বপ্নপূরণ হয়েছে।”

Advertisement

অভীকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে তৃতীয় (৪৯৪) মালদহের ইংরেজবাজারের অভিষেক গুপ্তও মাধ্যমিকে রাজ্যে চতুর্থ হয়েছিলেন। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল তিনিও। মালদহ রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্র বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে যোগ্যদের খুব সমস্যা হচ্ছে। তাঁরা চাকরি হারাতে বসেছেন। আশা করব, যাঁরা যোগ্য, তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন।” তাঁর সংযোজন, “রাজনীতিতে বিশ্বাস নেই। তবে রাজনীতি উন্নয়নের হওয়া উচিত।” ইংরেজবাজার শহরের কৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা অভিষেক। বাবা শিবশান্ত গুপ্ত নার্সিংহোমের কর্মী। মা অনামিকা সাহা গুপ্ত প্রাথমিক শিক্ষিকা। অনামিকা বলেন, “মাধ্যমিকের পরে, ছেলে পরিশ্রম আরও বাড়িয়েছিল। ফল পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকেও ছেলে মেধা তালিকায় থাকায় আনন্দ হচ্ছে।”

রাজ্যের দুই প্রান্তের দুই কন্যা আছেন চতুর্থ স্থানে। হুগলির চন্দননগরের কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দিরের স্নেহা ঘোষ (৪৯৩) তাঁদের অন্যতম। তাঁর যমজ বোন সোহা মেধা তালিকায় দশম স্থানে। তিনিও ওই স্কুলেরই ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, দু’জনেই কলা বিভাগের। পরিবার সূত্রের খবর, দু’জনের বয়সের ফারাক মাত্র এক মিনিটের। শখ-আহ্লাদ, পছন্দ-অপছন্দ সবই সমান। দু’জনেই অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চান।

৪৯৩ পেয়ে চতুর্থ স্থান পেয়েছেন কোচবিহারের প্রতীচী রায় তালুকদারও। তিনি কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমির ছাত্রী। তাঁর বাবা প্রণব রায় তালুকদার ও মা ঝুমা সাহা দু’জনেই হাই স্কুলের শিক্ষক। প্রতীচী বলেন, “ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই। ‘নিট’ দিয়েছি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল হবে ভেবেছিলাম। তবে এত ভাল র‌্যাঙ্ক হবে ভাবিনি!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement