নবান্ন। —ফাইল চিত্র।
প্রকল্প চালু হওয়ার পরে এই প্রথম। চলতি আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) জলজীবন মিশনে প্রথম ভাগের পরে দ্বিতীয় ভাগের বরাদ্দও দ্রুত হাতে পেল রাজ্য।
প্রশাসনিক মহলের খবর, ২০১৯ সালে প্রকল্পটি চালু হওয়ার পরে এত দ্রুত দ্বিতীয় ভাগের টাকা পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। কারণ, কেন্দ্রের যা নিয়ম, তাতে এতদিন প্রথম ভাগের পরে দ্বিতীয় ভাগের টাকা চাওয়ার জায়গায় সময় মতো পৌঁছনো যায়নি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তাদের মতে, এখন কাজের গতি অনেক বাড়িয়ে খরচের কেন্দ্রীয় মানদণ্ডে পৌঁছনো গিয়েছে বলেই দ্বিতীয় ভাগের বরাদ্দ দ্রুত পাওয়া গিয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘বাধা’ কাটিয়ে বরাদ্দের জোগান এ ক্ষেত্রে বাড়লেও, একশো দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ থেকে গিয়েছে ‘তিমিরেই’।
সাধারণত দু’টি কিস্তিতে টাকা আসার কথা। প্রথম কিস্তির টাকা আসে দু’টি ভাগে। দ্বিতীয় কিস্তিতেও তাই। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জলজীবন মিশনে প্রথম কিস্তির প্রথম ভাগের প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। এক মাসের মাথাতেই ওই কিস্তির দ্বিতীয় ভাগের আরও প্রায় ৯৫১ কোটি টাকা রাজ্যকে পাঠিয়েছে। সব মিলিয়ে সেই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৯০৩ কোটি টাকা। দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই প্রকল্পে কেন্দ্র-রাজ্যের অংশিদারি ৫০% করে। ফলে কেন্দ্র যে অর্থ দিচ্ছে, তার সঙ্গে রাজ্যের ভাগ মিলিয়ে (স্টেট ম্যাচিং গ্রান্ট) মোট বরাদ্দের ৮০% খরচ করলে, তবে পরের ভাগ পাওয়া যায়। তা করা গিয়েছে বলেই নতুন বরাদ্দ এসেছে। কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ বার দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ যাতে পাওয়া যায়, তার জন্য সব জেলার কাজের গতি বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সেই বরাদ্দের আবেদন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের বরাদ্দ এবং রাজ্যের অংশিদারিত্ব মিলিয়ে এখন প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা রয়েছে। তার ৮০% খরচ করলে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ চাওয়া সম্ভব। এখনকার গতি ধরে রাখতে পারলে সেই কিস্তির অর্থ পেতে সমস্যা হবে না।”
কিন্তু এতদিন কেন প্রথম কিস্তির দ্বিতীয় ভাগের বরাদ্দ সময় মতো আনা যায়নি?
আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ২০১৯ সালে প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পরে এ রাজ্যে সেই কাজের গতি ছিল বেশ মন্থর। লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি রাজ্য। কাজের গতি এবং খরচ নিয়ে কেন্দ্র একাধিক বার রাজ্যের ভূমিকাকে নিশানা করেছিল। এমনকি মাঝে এক বার প্রকল্পের টাকা আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি পর্যন্ত তৈরি হয়। ২০২১ সালে তৃতীয় বার তৃণমূল সরকার দায়িত্বে ফেরার পরে গতি বাড়ানো হয় প্রকল্পের কাজে। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন দফতরের মন্ত্রী-আমলারা।
দফতর সূত্রের বক্তব্য, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে যেখানে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৪৯৮ কোটি টাকা, তা-ই ২০২১-২২ সালে পৌঁছয় ২৮৪১ কোটি টাকায়। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে খরচ আরও বেড়ে হয় প্রায় ৫৩৪৭ কোটি টাকা। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসেই প্রায় ৩৬৫১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তাই আগামী মার্চে তা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এক কর্তার কথায়, “১.৭৩ কোটি জলের সংযোগ দেওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬৭.৮০ লক্ষ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে এক কোটি পরিবারে জলের সংযোগে পৌঁছনোর লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে।”