Death of Pregnant Women

গাড়ির অভাবে প্রসূতির মৃত্যু, ঘরেই প্রসব

২০২৩ এর সেপ্টেম্বরে সময়মতো নিশ্চয়যান না পাওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের ভালুকাদহতে এক আসন্নপ্রসবার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

অর্থ সঙ্কটে পদে-পদে পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। সময়মতো টাকা খরচের হিসাব দেখাতে না পারায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচএম)-এর টাকা কেন্দ্র আটকে দিয়েছে। তাতে বিশেষ করে মা ও শিশুদের পরিষেবায় তৈরি হওয়া সমস্যা জটিল আকার নিচ্ছে। প্রসূতি ও শিশুদের বাড়ি থেকে হাসপাতাল আনা-নেওয়া করার জন্য নির্ধারিত রাজ্যের ১৯৬৯টি ‘নিশ্চয়যান’ অ্যাম্বুল্যান্সের বকেয়ার পরিমাণ জমতে জমতে প্রায় ৩০ কোটিতে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

ফলে ধস নেমেছে নিশ্চয়যানের পরিষেবায়। একের পর এক গাড়ি চালাতে না পেরে মালিকেরা তা বসিয়ে দিচ্ছেন। যখন-তখন বিভিন্ন জেলায় টাকার দাবিতে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফোনে ডাকার পরেও নিশ্চয়যান আর নিশ্চিত ভাবে এসে পৌঁছোচ্ছে না। অভিযোগ, তাতে একাধিক ক্ষেত্রে প্রসূতি অথবা তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা বা হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে রাস্তার প্রসবের ঘটনা ঘটেছে।

শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের একাংশ স্বীকার করছেন, রাজ্যে এখনও মাতৃমৃত্যুর হার গোটা দেশের মাতৃমৃত্যুর হারের থেকে বেশি এবং এখনও একাধিক জেলায় বাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনার অন্যতম কারণ হল, সময়মতো নিশ্চয়যান না পাওয়া। ২০২২-২০২৩ সালে রাজ্যে মোট মাতৃমৃত্যু হয়েছে ৮৪২টি। ২০২৩ এর এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৮৫৮ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে রাজ্যে ১১ হাজার ৮০০ শিশু জন্মেছে বাড়িতে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২০০ শিশুর হাসপাতালের বদলে বাড়িতে জন্ম হয়েছে।

Advertisement

অভিযোগ, ২০২৩ এর সেপ্টেম্বরে সময়মতো নিশ্চয়যান না পাওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের ভালুকাদহতে এক আসন্নপ্রসবার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ওই বছর ১০ ডিসেম্বরে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ পঞ্চায়েতের দেউচি এলাকায় নিশ্চয়যান না-পেয়ে হাসপাতাল যাওয়ার পথে টোটোতেই সন্তান প্রসব করেন এক মহিলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়ায় সময়মতো নিশ্চয়যান না-পেয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে সন্তান প্রসব করেন মহিলা। ২০২৪ সালের শুরুতেই ২ জানুয়ারি ২০২৪, নিশ্চয়যান মালিকেরা দীর্ঘদিনের বকেয়া টাকা না-পেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ করে দেন টানা ২-৩ দিন। ১১টি নিশ্চয়যান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘোরতর সমস্যায় পড়েন প্রসূতিরা। এই রকম আরও উদাহরণ রয়েছে।

‘অল বেঙ্গল নিশ্চয়যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটার্স ইউনিয়ন’ এর সভাপতি গোপালচন্দ্র গড়াইয়ের কথায়, ‘‘আমাদের পক্ষেও তো আর টানা সম্ভব হচ্ছে না। তিন-চার মাস পর পর বকেয়ার ২০ শতাংশ, কখনও ২৫ শতাংশ টাকা সরকার মেটাচ্ছে। বকেয়া জমতে জমতে ৩০ কোটি পার হয়েছে। জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া। তার উপর ২০০৯ সালের পর থেকে আমাদের রেট বাড়ানো হয়নি। গাড়ি চলবে কী করে? দফায় দফায় স্বাস্থ্যভবনে ধর্না দিয়ে কোনও লাভ হয়নি।’’

নিশ্চয়যানের মালিকদের আরও ক্ষোভ, একে তাঁদের পাহাড়প্রমাণ বকেয়া, তার উপরে তাঁদের ব্যবসায় কোপ মেরে প্রসূতি ও শিশুদের আনা-নেওয়ার জন্য রাজ্য ‘১০২’ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করেছে। ওই পরিষেবায় প্রায় এক হাজারটি অ্যাম্বুল্যান্স চলে। তাদের রেট আবার নিশ্চয়যানের থেকে বেশি!

কিন্তু প্রশ্ন হল, ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সের টাকাও তো স্বাস্থ্য মিশন থেকে আসে। তারা কি টাকা পাচ্ছে? ওই পরিষেবার মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আমাদেরও অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে। তবে আমাদের তিন হাজার কোটি টাকার সংস্থা। ১৮টি রাজ্যে আমরা পরিষেবা দিই। ফলে এক রাজ্যে টাকা বকেয়া থাকলে আমাদের খুব সমস্যা হয় না। তবে বিভিন্ন জায়গায় নিশ্চয়যানগুলি আমাদের কাজে বাধা তৈরি করছে।’’

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দিল্লির সঙ্গে টাকা নিয়ে কথা চলছে। নিশ্চয়যানকে টাকা একেবারে বন্ধ করা হয়েছে, তা নয়। অল্প অল্প করে মেটানো হচ্ছে।’’ আর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, ‘‘টাকার ব্যবস্থা হচ্ছে। সব সমস্যা মিটে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement