মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
পূর্বঘোষিত নতুন সাতটি জেলা গঠনের পরিকল্পনা এখনই কার্যকর করা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার নদিয়ার রানাঘাটে ছাতিমতলা মাঠে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘এখন শুধু দু’টো নতুন জেলা হবে। উত্তর ২৪ পরগনা ভেঙে বসিরহাট ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভেঙে সুন্দরবন।’’ অর্থাৎ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বাঁকুড়া ভাগের সিদ্ধান্ত আপাতত বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে স্পষ্ট করে দেন তিনি। মত পরিবর্তনের কারণ হিসাবে আধিকারিকের অভাবের কথা জানান। তাঁর কথায়, ‘‘নদিয়া এখন ভাগ হচ্ছে না। এখন এত অফিসার কোথায়! জেলা ভাগ করতে হলে অফিসার লাগবে। যখন হবে, তখন বলে দেব।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “ছ’টি জেলা আমরা ইতিমধ্যে তৈরি করেছি। এখন সরকারের এতো আধিকারিক নেই। আধিকারিক না থাকলে চালাবেন কারা?’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ জেলা তো করে দেওয়া হয়েছে। রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলা করা হয়েছে। আস্তে-আস্তে হবে, যখন লোক পাওয়া যাবে।”
গত অগস্টে সরকার ঘোষণা করে, রানাঘাট, বসিরহাট, বহরমপুর-কান্দি, জঙ্গিপুর, সুন্দরবন, ইছামতী ও বিষ্ণুপুর— এই ৭টি নতুন জেলা হবে। অর্থাৎ ভাগ হওয়ার কথা ছিল, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। সরকারের যুক্তি ছিল, নতুন জেলা তৈরি হলে সেই জেলার জন্য কেন্দ্রের থেকে আলাদা টাকা মিলবে। পাশাপাশি, প্রশাসনিক পরিষেবার বিকেন্দ্রীকরণে পরিষেবা তুলনায় ভাল হবে।
তা হলে দু’মাস পরে সেই সিদ্ধান্ত হঠাৎ স্থগিত করার কারণ কি শুধুই আধিকারিকদের অভাব? রাজনৈতিক মহলের মতে, এর পাশাপাশি অন্যতম কারণ আর্থিক সঙ্কট। সাংসদ আবু তাহের খান এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকের মঞ্চে ছিলেন। পরে তিনিও বলেন, ‘‘এখন আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। অফিসারও নেই। তাই আপাতত জেলা বিভাজন স্থগিত রয়েছে।’’
একই সঙ্গে মনে করা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না বলেই এই মত বদল। গত অগস্টে পাঁচ জেলা ভেঙে সাত জেলার ঘোষণার পরেই সেই বিভক্তিকরণ নিয়ে একাধিক জেলায় বিতর্ক ও প্রতিবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছিল নদিয়ায়। জেলা ভাগ হলে নদিয়ার ঐতিহ্য নষ্ট হবে বলে মত ছিল অনেকেরই।
এমনিতেই বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়ায় ভাল ফল হয়নি শাসকদলের। তার উপর মতুয়া ভোট, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, অনুপ্রবেশ এবং দলের অন্দরে কোন্দলের মতো বিষয়গুলি নিয়ে তৃণমূল এখানে খুব স্বস্তিতে নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মত, এর মধ্যে জেলা ভাগ করে জনগণের একাংশের বিরাগভাজন হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে নিজেদের ক্ষতি করতে চায়নি তৃণমূল। তাই স্থগিত হয়েছে জেলা ভাগ।
আবার বসিরহাটের দশটি ব্লক নিয়ে পৃথক জেলা হলে সুন্দরবনের কোন অংশের মানুষ কোন জেলার মধ্যে পড়বেন তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। প্রত্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চল কোন জেলার মধ্যে যাবে, কতটা জায়গা নিয়ে বসিরহাট জেলা হবে তাও পরিষ্কার নয়। মুর্শিদাবাদকে তিন ভাগে ভাগ করার প্রক্রিয়াও আপাতত স্থগিত রইল। জেলা যে ভাগ হচ্ছে না, তা কিছু দিন আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আসন সংরক্ষণ নিয়ে ঘোষণাতেই স্পষ্ট হচ্ছিল। সেখানে জেলা পরিষদে মুর্শিদাবাদে ৭৮টি আসন ধরেই খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়।