Bengal SSC Recruitment Scam

গরমে কাহিল অনেকে, আন্দোলনে সংখ্যা কমেছে চাকরিহারাদের

এসএসসি অফিসের সামনে বসে থাকা চাকরিহারা শিক্ষকের সংখ্যা গত দিনের তুলনায় কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১৩
Share:
চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান-বিক্ষোভে শরিক বৃদ্ধও। বুধবার, সল্টলেকে।

চাকরিহারা শিক্ষকদের অবস্থান-বিক্ষোভে শরিক বৃদ্ধও। বুধবার, সল্টলেকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

মাসের প্রথমে মেয়ে হাতে তুলে দেন পাঁচ হাজার টাকা। সেটুকুই তাঁর সারা মাসের সম্বল। অথচ সেটুকুও আর থাকবে কিনা, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও বেশি গরমে সল্টলেকের স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের সামনে এসে মেয়ের বয়সি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বসে রয়েছেন রানাঘাটের বাসিন্দা, ৭৫ বছরের নির্মল বিশ্বাস।

বুধবার ওই বৃদ্ধ বললেন, ‘‘৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে।’’ জানালেন, এ দিন মেয়ে রুমা আসতে না পারায় তাঁর জায়গায় আন্দোলনে শরিক হতে এসেছেন তিনি। নির্মল বলেন, ‘‘এই গরমে অসুস্থ লাগছে। কিন্তু আন্দোলনে তো থাকতেই হবে। মেয়ে আসেনি, তাই আমি নিজে এসেছি।’’ পাশে বসে নির্মলকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা আর এক চাকরিহারা শিক্ষিকা সবিতা ভক্ত বললেন, ‘‘কাকাবাবুকে অনেক বার বললাম, বাড়ি চলে যেতে। উনি যাচ্ছেন না।’’

এসএসসি অফিসের সামনে বসে থাকা চাকরিহারা শিক্ষকের সংখ্যা গত দিনের তুলনায় কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে। কোন শিক্ষকের চাকরি আছে এবং বেতন পাচ্ছেন, সেই চিঠি শিক্ষা দফতর থেকে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে পৌঁছনোর বার্তা ছড়াতেই কি আন্দোলনের ঝাঁঝ কমল? চাকরিহারা শিক্ষকদের অন্যতম নেতা চিন্ময় বিশ্বাসের দাবি, ‘‘প্রবল গরমে কেউ কেউ অসুস্থ বোধ করায় বাড়ি গিয়েছেন। সকলেই ফিরবেন। আন্দোলনের আগুন নেভেনি।’’

গত মঙ্গলবার যেমন চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে এসে একাধিক সংগঠনকে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল, এ দিন অবশ্য তাদের কারও দেখা মেলেনি। যদিও কিছু সংগঠন আন্দোলনকারীদের জন্য এনেছে জল, ওআরএস। এ দিন সংগঠনের হাত ধরে আসা সাহায্যের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দুপুরে খাওয়ার খানিক অসুবিধা হয়েছে। প্রবল গরমে কাছাকাছি কোথাও গিয়ে খেয়ে আসার মতো উৎসাহও পাচ্ছেন না কেউ। এক চাকরিহারা শিক্ষক বললেন, ‘‘পাশের দোকানে পোলাও আর আলুর দম ৮০ টাকা। কিন্তু গরমে সে সব খেতে ইচ্ছে করছে না। বরং দেখলাম, কোনও একটি সংগঠন থেকে কয়েক কেজি শসা দিয়ে গিয়েছে। গরমে শসা খাচ্ছি, বেশ স্বস্তি দিচ্ছে।’’ পিচগলা গরমে রাস্তাতেই খবরের কাগজ পেতে শুয়ে-বসে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দক্ষিণ দিনাজপুরের কয়েক জন চাকরিহারা শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বেঁচে গিয়েছি মেট্রো রেলের এই সেতুটির জন্য। প্রায় ৫০ ডিগ্রি গরমে সেতুটিই যেটুকু ছায়া দিচ্ছে।’’

ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের পক্ষ থেকে এ দিনও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই শিবিরে দেখা গেল, এক জন শিক্ষক তাঁদের কাছে রক্তচাপ মাপাচ্ছেন। বললেন, ‘‘গরমে ঘামে জামাকাপড় ভিজে গিয়েছে। দুর্বল লাগছিল, মাথাটা ঘুরছিল। তাই রক্তচাপ মাপাতে এলাম। পর পর দু’রাত জেগে। আজ আর পারব না রাতে থাকতে।’’

আর জি কর-কাণ্ডের সময়ে পূর্ব বর্ধমান থেকে ছেলেকে নিয়ে হুইলচেয়ারে এসেছিলেন শেখ কোহিনুর। শিক্ষকদের আন্দোলনেও তিনি হাজির। বললেন, ‘‘গরমে হাঁসফাঁস করছি। কিন্তু আমার ছেলের বয়সি সব ছেলেমেয়েরা এই গরমে রাস্তায় বসে আছে। আমি প্রতিবাদের ভাষা পছন্দ করি। তাই ওদের প্রতিবাদে শামিল হতে এসেছি।’’

এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভের মতো করুণাময়ী মোড়ে ধর্না চালাচ্ছেন গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি কর্মীরা। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভিতরে অনশনকারীদের মধ্যে এক জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।’’ সেখানেও দেখা গেল, হাতপাখা দিয়ে অন্যদের হাওয়া করার দৃশ্য। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘সকলে মিলে হাতপাখার হাওয়া খাওয়ার মধ্যে দিয়ে একতা তৈরি হচ্ছে। এই একতাই আন্দোলনর জয় এনে দেবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন