— প্রতীকী চিত্র।
সান্দাকফুর পথে উচ্চতা, প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল এক বালক। ফালুটে সীমান্ত চৌকিতে (বিওপি) মোতায়েন সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) জওয়ানদের তৎপরতায় ১১ বছরের ওই পর্যটকের প্রাণ বাঁচল। এমন ঘটনার জেরে ফের ওই এলাকায় পর্যাপ্ত সরকারি পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, গত বছর ওই রুটে উচ্চতাজনিত অসুস্থতার জেরে তিন জন এবং এ বছরের শুরুতে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল। সমতল থেকে তড়িঘড়ি অনেকটা উচ্চতায় উঠতে কারা সক্ষম, কারা নন— তা যাচাই করা ওই পথের শুরুতেই কেন করা হচ্ছে না, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে ছ’জনের একটি পর্যটক দল শনিবার ফালুটে পৌঁছয়। দলে ছিলেন বিপ্লব দাস ও তাঁর ১১ বছরের ছেলে সাক্ষ্য। উচ্চতা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে ফালুট পৌঁছনোর পরেই অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারায় সাক্ষ্য। খবর পেয়ে ফালুট বিওপি-র পোস্ট কম্যান্ডার এসআই হরিকেশ কুমার এবং কোম্পানি কম্যান্ডার শিবু মণ্ডল (এসি) সেখানে যান।
এসএসবি সূত্রে খবর, জওয়ানেরা দ্রুত শিশুটির জন্য অক্সিজেন ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে জ্ঞান ফেরে সাক্ষ্যের। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। এর পরে পর্যটক দলটি গাইড শঙ্খলাল তামাংয়ের সঙ্গে রবিবার গোর্খের পথে রওনা দেয়। দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘আমাদের সাহসী জওয়ানদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে শিশুটির প্রাণরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।’’
প্রায় ১১,৯৩০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বিন্দু। সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা অনেক বেড়েছে। কিন্তু অভিযোগ, উচ্চতাজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি ক্রমাগত উপেক্ষা করে চলেছেন অনেকেই। হিমালয়জয়ী পর্বতারোহী তথা ‘হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের’ সদস্য দেবরাজ দত্ত বলেন, ‘‘মানেভঞ্জনের মতো অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গা থেকে হঠাৎ সান্দাকফুর মতো অধিক উচ্চতায় এক বারে চলে যাওয়াটাই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এটা পর্যটকেরা অনেকেই বুঝছেন না। তাই কড়া নজরদারি গোড়াতেই রাখা প্রয়োজন।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, যাঁরা পাহাড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সব দিক থেকে প্রস্তুত নন, তাঁদের জন্য বিপদের আশঙ্কা অনেকটাই। তা ওই এলাকায় টাঙানো বিভিন্ন সরকারি বোর্ডে লেখা রয়েছে। যদিও তা কেউ মানেন না বলে অভিযোগ। পর্যাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং অক্সিজেনের সরবরাহও ওই এলাকায় নেই বলে অভিযোগ উঠছে। পর্যটকদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ওই পথের শুরুতেই কেন নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা থাকছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। যদিও বিষয়টি নিয়ে দার্জিলিঙের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েলকে ফোন এবং ওয়টস্যাপ করে কোনও জবাব মেলেনি। দার্জিলিং জেলা প্রশাসনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সান্দাকফু যেতে হলে বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে।