প্রতীকী ছবি
অশান্ত আফগানিস্তানে প্রাণ হাতে করে দেশ ছাড়ার ছবি-ভিডিয়ো ওঁদের অনেকেই দেখেছেন। রবিবার কাবুলে তালিবানরা ঢুকতেই ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে সেখানে। আফগানিস্তানের পট পরিবর্তন কেমন ভাবে দেখছেন কলকাতার ‘কাবুলিওয়ালা’রা! জানার জন্য চাঁদনি চক এলাকায় ‘কাবুলিওয়ালা’দের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়া। কয়েক জন দু’এক কথা বলতে রাজি হলেও, বেশির ভাগেরই এক কথা, ‘‘আমরা ভারতীয়। ওখানে কী হচ্ছে বলতে পারব না।’’
‘কাবুলিওয়ালা’রা ঠিক কবে কলকাতায় এসেছেন বলা মুশকিল। বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। তেমনই মধ্য কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের আশপাশে বৌবাজার, চাঁদনি চক এলাকায় থাকেন অনেকে। এঁদের পূর্ব পুরুষরা আফগানিস্তান থেকে এসেছেন। শিকড় ওই দেশে হলেও নতুন প্রজন্মরা ভারতীয়। তবুও গত কয়েক দিনে কাবুল-সহ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি নন অনেকেই।
এর আগেও আফগানিস্তান অশান্ত হয়েছে। তখন কলকাতার অনেক ‘কাবুলিওয়ালা’ই তাঁদের মনের কথা জানিয়েছেন। এ বারও তাঁদের কথা জানতে সোমবার চাঁদনি চকের, ১৮-বি টেম্পল স্ট্রিটে যাওয়া। এই বাড়ির এক তলাতেই এক ‘কাবুলিওয়ালা’র সঙ্গে দেখা। তিনি নিজের নাম তো দূরঅস্ত্, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কোনও কথা বলতে চান না। অন্য এক জন বিকেলের নমাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। বললেন, ‘‘আমরা কলকাতায় থাকি। ওখানকার পরিস্থিতি নিয়ে এখানে কেউ কথা বলতে চাইনা।’’ একই সঙ্গে ‘সাবধান বাণী’, ‘‘পাশের ঘরে বাচ্চারা পড়াশোনা করছে। ওই দিকে গিয়ে ওদের বিরক্ত করবেন না।’’
চাঁদনি চকে আরও এক ‘কাবুলিওয়ালা’র কাছে আফগান পরিস্থিতি বা ওই দেশে এখনও কোনও আত্মীয় রয়েছেন কি না জানতে চাইলে, তিনি জানান, খুব ব্যস্ত রয়েছেন তাই কথা বলতে পারবেন না। তবে এখানে তিনি ভাল আছেন সেটাও জুড়ে দিলেন। সন্ধ্যার নমাজের পর অনেক ‘কাবুলিওয়ালা’ই চাঁদনি চকের একটি রেস্তরাঁয় খেতে যান। সেখানে গেলে এ বিষয়ে কথা হতে পারে বলে জানালেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ‘কাবুলিওয়ালা’রা রয়েছেন। কিন্তু আফগানিস্তান নিয়ে কোনও কথা জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। কিন্তু নিজেদের গণ্ডির বাইরে এই বিষয়ে আলোচনা করতে আগের মতো আর তাঁরা স্বচ্ছন্দ নন। তার মধ্যেই এক জন বললেন, ‘‘সবার মতো আমরাও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি টিভিতে দেখছি। যে কোনও দেশেই অত্যাচার হলে খারাপ। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘কয়েক পুরুষ ধরে এখানে রয়েছি।’’
এক জনই কেবল মুখ খুললেন। কাশেম খান। কাশেমের জন্ম কাবুলে। এখনও সেখানে আত্মীয়রা রয়েছেন। বাবার সঙ্গে কাবুল থেকে এসেছিলেন। পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী কাশেম বললেন,‘‘খবর পেয়েছি ওখানে আত্মীয়রা এখনও ঠিক আছেন।’’ চিন্তা হচ্ছে? তাঁর কথায়, ‘‘চিন্তা তো হবেই। দেশটা গড়ে উঠছিল। জানি না, নতুন যারা এসেছে তারা কী করবে এ বার! কাবুলের অবস্থাই বা কী হবে!’’
তবে যিনি এই রেস্তরাঁর হদিশ দিয়েছিলেন, সেই ‘কাবুলিওয়ালা’র জন্য ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি।