(বাঁ দিকে) সিভি আনন্দ বোস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র ।
রাজ্যের ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের জন্য রাজভবনে নামের তালিকা পাঠিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি অনুযায়ী এই তালিকা পাঠানো হয়েছে।
সেই তালিকায় যাদবপুরের জন্য সেখানকার ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্ত, গৌড়বঙ্গের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক পবিত্র চট্টোপাধ্যায়, দার্জিলিং হিলস বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ডেনমার্কের রসকিলা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ়িটিং প্রফেসর প্রেমকুমার পোদ্দার, ঝাড়গ্রাম সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অমিয়কুমার পান্ডার নাম পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়়াও, উত্তর ২৪ পরগনার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোককথা বিভাগের অধ্যাপক তপনকুমার বিশ্বাস, হুগলি রানি রাসমণি গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক আশুতোষ ঘোষের নাম আছে।
রাজ্য সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, তাদের তালিকা থেকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে স্থির হয়েছে। যদিও রাজভবনের বক্তব্য, দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়টি উত্থাপন করলেও এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের কোনও নির্দেশ নেই। শীর্ষ আদালত শুধু জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাজ্য চাইলে আরও কিছু নামের তালিকা পাঠাতে পারে।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডলে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে বিঁধে লিখেছেন, ‘‘রাজ্যের তালিকা থেকে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কোর্টে বলেছিলেন এবং আদালত তাতে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান আচার্য নিজের ভূমিকা সম্পর্কে বিভ্রান্ত। আমাদের কোনও বিভ্রান্তি নেই। আচার্য কেন বিভ্রান্তি তৈরি করছেন? তিনি কি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন?’’ পরে ব্রাত্য বলেন, ‘‘রাজ্যপাল তালিকা থেকে উপাচার্য নিয়োগ না করলে, আমরা বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে জানাব।’’
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য এবং রাজভবনের দ্বৈরথ চলছেই। শেষমেশ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছে। রাজ্যপাল নিজে পছন্দ করে যাদবপুরে বুদ্ধদেব সাউ এবং গৌড়বঙ্গে রজতকিশোর দে-কে অন্তর্বর্তী উপাচার্য করলেও পরে তাঁদের অপসারিত করেছেন।
প্রস্তাবিত নামগুলির মধ্যে ভাস্কর আগে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আশুতোষ রানি রাসমণি গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদও সামলেছেন তিনি। তপনকুমার বিশ্বাসও ২০২১ থেকে ২০২৩-এর জুন পর্যন্ত হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ছিলেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় প্রশাসনিক অচলাবস্থা কাটাতে তিনি ‘সদর্থক’ ভূমিকা নেবেন বলেও জানিয়েছেন। উপাচার্য নিয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কাজ সুষ্ঠু ভাবে হবে বলে দাবি করেছেন ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দেবনারায়ণ রায়ও। প্রসঙ্গত, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অমিয়কুমার পান্ডার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি এর আগে দু’দফায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য ছিলেন।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে রজতকিশোরকে রাজভবন সরিয়ে দিলেও রাজ্য তাঁকে পুনর্বহাল করে। রাজ্যের সিদ্ধান্ত মেনে চলার কথা জানায় কর্মসমিতিও। তবে অপসারণের পর রজতকিশোর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি বলেই খবর। দার্জিলিং হিলস ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের পছন্দের প্রার্থী প্রেমকুমার পোদ্দার এর আগেও এখানে কয়েক মাস অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে কাজ করেছেন।