কবর খুঁড়তে গিয়ে ডুকরে উঠলেন ওঁরা

বাহালনগরেও এ ভাবে একসঙ্গে পাঁচ জনের কবর কবে দেওয়া হয়েছে তা-ও মনে করতে পারছেন না গ্রামের প্রবীণেরা।

Advertisement

বিমান হাজরা

বাহালনগর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২০
Share:

গোরস্থানের পথে: বৃহস্পতিবার বাহালনগরে। নিজস্ব চিত্র

কাশ্মীর থেকে গ্রামে দুঃসংবাদটা এসেছিল মঙ্গলবার রাতেই— জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন বাহালনগরের পাঁচ জন শ্রমিক। তার পর থেকেই নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে সাগরদিঘির আটপৌরে ওই গ্রাম। বুধবার রাতে ফের খবর আসে, বৃহস্পতিবার সকালেই গ্রামে পৌঁছবে পাঁচ জন শ্রমিকের দেহ। সেই মতো তাঁদের কবর দেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়।

Advertisement

বাহালনগরের এক প্রান্তে রয়েছে গোরস্থান। বৃহস্পতিবার কাকভোরেই সেখানে চলে যান ইবাদত হোসেন, বদরুল শেখ-সহ জনা কুড়ি যুবক। গ্রামের কেউ মারা গেলে মূলত তাঁদের উপরেই কবর খোঁড়ার দায়িত্ব বর্তায়। তবে এ দিন কবর খোঁড়ার সময়ে মাঝেমধ্যেই থমকে গিয়েছেন ওঁরা। চেনা মুখগুলোর কথা মনে পড়তেই ডুকরে কেঁদে উঠেছেন ইবাদতেরা।

ইবাদত বলছেন, ‘‘নইমুদ্দিন চাচা, মোরসালিম চাচাদের হাত ধরেই খেত চিনেছি। ওঁদের সঙ্গেই শিখেছি কী ভাবে কবর খুঁড়তে হয়। আজ সেই লোকগুলোর কবরই আমাদের খুঁড়তে হচ্ছে। এর থেকে বড় কষ্টের আর কিছু নেই। চাচারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ওদের এ ভাবে মেরে কার কী লাভ হল, বলুন তো!’’

Advertisement

বাহালনগর গ্রামে এমনিতে তেমন গন্ডগোল নেই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। গ্রামের চাষআবাদের কাজ ফুরোলেই অনেকেই চলে যান কাশ্মীরে। সেখানে মূলত আপেল খেতেই নানা রকম কাজ করেন তাঁরা। মজুরি সেখানে বেশি বলে এক এক করে অনেকেই পা বাড়িয়েছিলেন ভূস্বর্গে। কিন্তু সেখানে কাজ করতে গিয়ে যে এ ভাবে কফিনবন্দি হয়ে ফিরতে হবে তা ভাবতেই পারেননি কেউ।

এ দিন ওই পাঁচ শ্রমিককে দেখতে গ্রামে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। বাহালনগরেও এ ভাবে একসঙ্গে পাঁচ জনের কবর কবে দেওয়া হয়েছে তা-ও মনে করতে পারছেন না গ্রামের প্রবীণেরা। তাঁদেরই এক জন আরশাদ শেখ বলছেন, ‘‘গ্রামে অভাব আছে। কিন্তু অশান্তি নেই। আমরা সকলেই শান্তিতে বাস করি। এই ঘটনার পরে সব এলোমেলো হয়ে গেল। গ্রাম থেকে হারিয়ে গেল পাঁচ জন জলজ্যান্ত মানুষ। এ শোক সইব কী করে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement