কোনও কোনও কলেজে অনেক আসন এখনও ফাঁকা পড়ে আছে। প্রতীকী ছবি।
দু’-দু’বার ভর্তির আবেদন নেওয়া সত্ত্বেও কোনও কোনও কলেজে অনেক আসন এখনও ফাঁকা পড়ে আছে। আবার বহু কলেজে মেধা-তালিকা দীর্ঘ। এই পরিস্থিতিতে আসন খালি থেকে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আজ, সোমবার স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে চলেছে। কিন্তু আসন পূরণ না-হওয়ার সমস্যার মোকাবিলা কী ভাবে করা যাবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের বৃহৎ অংশের আশঙ্কা।
শিক্ষা জগতের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তির ব্যবস্থা হলে ওই সমস্যার সুচারু সুরাহা হতে পারত। কিন্তু এ বার সেই ব্যবস্থা চালু করতে গিয়েও শেষ বেলায় পিছিয়ে যায় রাজ্য সরকার। ফলে পুরনো পদ্ধতিতেই ভর্তি হয়েছে এবং থেকে গিয়েছে আসন খালি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা। ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারির কাউন্সেলিং আগে না-হওয়ায় এই আশঙ্কা বাড়ছে বিভিন্ন কলেজ-কর্তৃপক্ষের। কারণ, রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড, জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেন এবং মেডিক্যালে ভর্তির কাউন্সেলিংয়ের পরে বহু পড়ুয়া কলেজ ছেড়ে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে যাবেন। তাঁদের শূন্য আসন ভরানোর জন্য আবার উদ্যোগী হতে হবে কলেজকে। তাতে সব আসন পূরণের আশা কম। যে-সব আসন ভর্তি হবে, ক্লাসের পাঠ এগিয়ে যাওয়ায় সেই সব আসনের পড়ুয়ারা পাঠ্যক্রম শেষ করতে হিমশিম খাবেন।
এ বছর উচ্চশিক্ষা দফতর প্রথমে জানিয়েছিল, স্নাতক স্তরে অনলাইনে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ ৫ অগস্ট। আর গোটা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু বাস্তবে বিভিন্ন কলেজে বহু আসন শূন্য থেকে গিয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতর তাই ১২-১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবার ভর্তির আবেদন নেওয়ার অনুমতি দেয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে। ভর্তি প্রক্রিয়া ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। অথচ আগেই জানানো হয়েছিল, নতুন ক্লাস শুরু করতে হবে ১৯ সেপ্টেম্বর। তাই ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে আজ ক্লাস শুরু হচ্ছে।
নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী জানান, দু’দফায় অনলাইনে আবেদন নেওয়ার পরে তাঁর প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৬৫% আসন পূরণ হয়েছে। মহেশতলা কলেজের অধ্যক্ষা রুম্পা দাস জানান, তাঁদের ১২৪৮টি আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে কমবেশি ৪০০টি। দর্শন ও সংস্কৃত অনার্সে দু’জন করে পড়ুয়া মিলেছে। অর্থনীতি অনার্সে কেউ ভর্তি হননি।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকারের আশঙ্কা, কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদের ভর্তি হওয়া বেশ কিছু আসন আবার ফাঁকা হয়ে যাবে। কারণ, এ বার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের কাউন্সেলিং চলছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেনের ক্ষেত্রে সবে নাম নথিভুক্তি শুরু হয়েছে। ডাক্তারিতে ভর্তির কোনও কাজই শুরু হয়নি। যাঁরা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এই তিন কাউন্সেলিংয়ের পরে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে যাবেন। তাঁদের শূন্য আসনে আবার ভর্তি নিতে হবে। শিউলির প্রশ্ন, ‘‘এখন সিমেস্টার পদ্ধতিতে পড়াশোনা হয়। তাই এ ভাবে আসন ফাঁকা হওয়ার পরে ফের ভর্তি হতেই সিমেস্টারের অর্ধেক সময় চলে যাবে। পড়ুয়ারা পাঠ্যক্রম করবে কবে?’’
শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে অথবা তার আগে যদি ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যালে ভর্তির কাউন্সেলিং শুরু না-হয়, তা হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে।